হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করল ইসরায়েল
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের সাম্প্রতিক বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন সামরিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনার সূচনা করেছে। তিনি ইরানের রাজধানী তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন। একইসঙ্গে তিনি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ড এবং তেহরানের প্রভাব
গত জুলাইয়ের ৩১ তারিখে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ইরানের উত্তরাঞ্চলের একটি সামরিক অফিসারদের আবাসিক ভবনে প্রজেক্টাইল বোমা হামলায় নিহত হন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠলেও তারা এতদিন বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছে।
- ইসরায়েলের স্বীকারোক্তি: প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ হানিয়ার হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে এটিকে “অপশক্তির বিরুদ্ধে চরম আঘাত” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
- আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া: এই হত্যাকাণ্ড ফিলিস্তিন এবং মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এই হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হুতিদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি
কাটজ জানিয়েছেন, ইসরায়েল হুতিদের কৌশলগত অবকাঠামো ধ্বংস এবং তাদের নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা করছে।
- হুতিদের হামলা: গত কয়েক মাসে হুতিরা ইসরায়েলের ওপর একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। গত শনিবার হুতিদের একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের জাফার একটি পার্কে আঘাত হানে, যাতে ১২ জন সামান্য আহত হন।
- ইসরায়েলের জবাব: হুতিদের শক্ত ঘাঁটি ইয়েমেনের হোদেইদা এবং সানায় আক্রমণ চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন কাটজ।
হিজবুল্লাহ ও আঞ্চলিক সংঘাত
কাটজ আরও দাবি করেছেন যে, ইসরায়েল ইতোমধ্যে হামাস, হিজবুল্লাহ, এবং ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করেছে। তিনি লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং গাজার হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালানোর কথাও উল্লেখ করেছেন।
- ইরানের পাল্টা হামলা: গত অক্টোবরে হিজবুল্লাহ নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: একটি বিপজ্জনক দিক
ইসরায়েলের এসব কার্যক্রম এবং হুমকি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
- ইরানের প্রতিশোধের অঙ্গীকার: ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
- আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা: ইসরায়েল, ইরান, হামাস, হিজবুল্লাহ এবং হুতিদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা একটি বড় আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনার মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের পরিধি নতুন মাত্রায় পৌঁছাতে পারে, যা শুধু এই অঞ্চলের নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।