December 22, 2024
দুই শিক্ষার্থীর হত্যার বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ

দুই শিক্ষার্থীর হত্যার বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ

ডিসে ১৮, ২০২৪

রাজধানী ঢাকার রামপুরা ব্রিজে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ বুধবার বিকেলে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে তাঁরা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষার্থীর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।

সমাবেশ ও যানজট

বিকেল চারটার পর শিক্ষার্থীরা “সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের” ব্যানারে ব্রিজে অবস্থান নেন। এ সময় ব্রিজের পূর্ব পাশের দুই লেন বন্ধ হয়ে গেলে যানজট সৃষ্টি হয়। এক লেন দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও পুরো এলাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। বিকেল পৌনে ছয়টায় সমাবেশ শেষ হয়।

সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে একটি মশাল মিছিল বের করেন। মিছিলটি রামপুরা ব্রিজ হয়ে মেরুল বাড্ডার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত গিয়ে আবার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে এসে শেষ হয়।

হত্যাকাণ্ড ও শিক্ষার্থীদের দাবি

১২ ডিসেম্বর ভোরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাজবির হোসেন শিহান। একই দিনে নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সীমান্ত, যিনি ১৪ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা জানান, শুধু দুই হত্যাকাণ্ড নয়, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের হুমকি ও গুপ্ত হত্যার অভিযোগও ওঠেছে। শিক্ষার্থীরা এসব হত্যার পেছনের পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং বিচার দাবিতে তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।

সমাবেশে বক্তাদের বক্তব্য

সমাবেশে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নাজিফা জান্নাত বলেন, “সারা দেশে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যত দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবে এবং দুই হত্যার বিচার না হবে, তত দিন আমাদের আন্দোলন চলবে।”

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদ বিন রনি বলেন, “ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে এই সরকারের বৈধতা থাকবে না। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করব।”

সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী যাবের বিন নূর বলেন, “সরকার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ। অবিলম্বে দুই হত্যার বিচার এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী প্রিতম কুমার বলেন, “দেশকে নিরাপদ করতে আমরা জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছি। কিন্তু আজও শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। কতবার ছাত্রদের জীবন দিতে হবে?”

অভিভাবকদের উদ্বেগ

ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত ইমপেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী জিল্লুর শেখের বাবা হাসান শেখ সমাবেশে বলেন, “আমার ছেলে যে কারণে শহীদ হয়েছে, সেই আকাঙ্ক্ষা এখনো পূরণ হয়নি। ছাত্রদের হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং সব হত্যার পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে হবে।”

পুলিশের অবস্থান

বিক্ষোভ চলাকালে সড়ক অবরোধের কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত বিচার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

Leave a Reply