দিনাজপুরে ছাত্রলীগের তিন কর্মী হত্যাকাণ্ড: বালু ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে চার নেতা গ্রেপ্তার
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় বালু উত্তোলনের অর্থ ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের তিন কর্মী হত্যার ঘটনায় পুলিশ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত নেতারা:
১. নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. জিয়াউর রহমান (মানিক)।
২. সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক।
৩. সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জামিনুর রহমান।
4. উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রুবেল হোসেন।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণ:
২০২২ সালের ৩০ মার্চ রাতে নবাবগঞ্জ উপজেলার ‘বান্নি মেলা’ থেকে মোটরসাইকেলে ফেরার পথে রিমন ইসলাম, কিবরিয়া ইসলাম, এবং সাব্বির রহমান নামে তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় চলতি বছরের ২৬ আগস্ট রিমনের বাবা রবিউল ইসলাম নবাবগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়:
- নিহত রিমন স্থানীয় করতোয়া নদীর বালুমহালের ট্রাক্টরের হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করতেন।
- বালু বিক্রির অর্থ এবং ট্রাক্টর ব্যবহারের হিসাব নিয়ে রিমন ও তার বন্ধুদের সঙ্গে আসামি শাহিনুর রহমানের বিরোধ দেখা দেয়।
- ৩০ মার্চ রাতে বান্নি মেলা থেকে ফেরার পথে শাহিনুর এবং অন্য আসামিরা তাদের পথ আটকান এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।
- হত্যার পর মরদেহগুলো রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়।
মামলার বিবরণ:
মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য (দিনাজপুর-৬ আসন) শিবলী সাদিকসহ ৬৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন:
- শিবলী সাদিকের ছোট ভাই তাজওয়ার মোহাম্মদ ফাহিম।
- নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম সবুজ।
- দপ্তর সম্পাদক মো. শামসুজ্জামান।
- সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।
- উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান ওরফে সবুজ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি:
হত্যার পর ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সাবেক এমপি শিবলী সাদিকের প্রভাব খাটিয়ে নবাবগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ এই ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করেন এবং ময়নাতদন্ত ছাড়াই দ্রুত দাফনের জন্য চাপ দেন।
তদন্ত ও গ্রেপ্তার:
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও থানার উপপরিদর্শক মহুবার রহমান জানান, আসামিরা ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন। বৃহস্পতিবার ঢাকার মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের শুক্রবার আদালতে হাজির করা হবে।