বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজক সৌদি আরব
ফিফার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০৩৪ ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে সৌদি আরব। গতকাল বুধবার ভার্চ্যুয়াল ফিফা কংগ্রেসে আয়োজক নির্ধারণে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। যদিও প্রার্থী ছিল একটিই—সৌদি আরব। ফিফা সদস্য দেশগুলো নাম ঘোষণার পর হাততালি দিয়ে সমর্থন জানায়, যা ভোট হিসেবে বিবেচিত হয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনা
সৌদি আরবকে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব দেওয়ায় তীব্র সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ ২১টি সংস্থার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “অধিবাসী ও অভিবাসী কর্মীদের জন্য সুপরিচিত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ফিফার এই সিদ্ধান্ত বড় বিপদের মুহূর্ত চিহ্নিত করে।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের লেবার রাইটস অ্যান্ড স্পোর্টস প্রধান স্টিভ ককবার্ন মন্তব্য করেন, “সৌদি আরবে মৌলিক সংস্কার ছাড়াই শ্রমিকদের শোষণ অব্যাহত থাকবে। এমনকি তাদের হত্যা করাও অস্বাভাবিক নয়। তবুও ফিফা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণ
ফিফার ‘আবর্তন নীতি’ অনুসারে একই মহাদেশ টানা দুটি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারে না। ২০২৬ বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো। ২০৩০ বিশ্বকাপের আয়োজক স্পেন, পর্তুগাল, মরক্কো এবং তিনটি লাতিন আমেরিকান দেশ—উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে।
এই নীতি অনুযায়ী, ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার জন্য এশিয়া (এএফসি) ও ওশেনিয়া (ওএফসি) ছাড়া অন্য কোনো মহাদেশের সুযোগ ছিল না। ওএফসি-র অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর সক্ষমতা কম থাকায় প্রার্থিতা থেকে বাদ পড়ে। এএফসি’র অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া প্রাথমিকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করলেও পরে সরে দাঁড়ায়। ফলে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে সৌদি আরব ‘বিড’ করে এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আয়োজকের স্বত্ব পায়।
ফিফার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক
সৌদি আরবকে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ দিতে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর সক্রিয় ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২০২৩ সালের নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইনফান্তিনো সৌদি সরকারের অনুকূলে কাজ করেছেন। ২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজনে স্পেন, পর্তুগাল ও মরক্কোর বিড ঘোষণার পর সৌদি আরবের লক্ষ্য পরিবর্তন করে ২০৩৪ বিশ্বকাপের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়।
অন্য সময় ‘বিডিং প্রক্রিয়া’য় দীর্ঘ সময় দেওয়া হলেও ২০৩৪-এর ক্ষেত্রে মাত্র ২৫ দিন সময় দেওয়া হয়। বিডিং শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সৌদি আরব আগ্রহ প্রকাশ করে।
বিশ্বকাপ আয়োজনের ভবিষ্যৎ
সমালোচনার পরও সৌদি আরব ২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক চলমান থাকবে। সৌদি আরবের লক্ষ্য শুধু ফুটবল নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাও।