বাশারের পতন, সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফেরা নিয়ে আশাবাদী বিশ্বনেতারা
সিরিয়ায় দীর্ঘ ৫৪ বছরের পারিবারিক শাসনের অবসান ঘটেছে। বিদ্রোহীদের কাছে পরাজিত হয়ে দেশ ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। রাজধানী দামেস্ক দখল করে বিদ্রোহীরা বাশার সরকারের পতনের ঘোষণা দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে—সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরবে নাকি নতুন করে সংঘাতের সৃষ্টি হবে?
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশ্রুতি
বাশারের সরকারের পতনের পর বিশ্ব নেতারা সিরিয়ার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন।
- যুক্তরাষ্ট্র:
- প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিরিয়ার পুনর্গঠনে কূটনৈতিক সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনে সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
- রাশিয়া:
- বাশারের অন্যতম মিত্র রাশিয়া সামরিক হস্তক্ষেপে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও সিরিয়ার জনগণকে সমর্থন দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কনস্টান্টিন কোসাচিভ বলেন, “গৃহযুদ্ধ মোকাবিলার দায়িত্ব সিরিয়ার জনগণের। তবে প্রয়োজনে মস্কো সমর্থন দিতে প্রস্তুত।”
- ফ্রান্স:
- প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ বাশারের শাসনের পতনকে “বর্বর রাষ্ট্রের অবসান” বলে আখ্যায়িত করেছেন। সিরিয়ার জনগণের সাহসিকতা ও ধৈর্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি তাদের শান্তি ও ঐক্যের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
- জার্মানি:
- চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সিরিয়ার জনগণ ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহানোর পর আসাদের শাসনের অবসান সুসংবাদ।” তিনি সংখ্যালঘুসহ সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সুরক্ষা এবং তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ মুক্ত সিরিয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
- ইরান:
- আসাদের প্রধান সমর্থক ইরান, সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে “উপযুক্ত অবস্থান” গ্রহণের কথা জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ ধ্বংসাত্মক বিদেশি হস্তক্ষেপ ছাড়াই নির্ধারণ করা উচিত।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
- পাল্টা অভ্যুত্থানের শঙ্কা: ক্ষমতার পরিবর্তন শান্তিপূর্ণভাবে হবে নাকি নতুন করে সহিংসতা ছড়াবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
- জাতিগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য: সিরিয়ায় সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে কিনা, সেটি ভবিষ্যৎ শাসকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
- বিদেশি হস্তক্ষেপ: তৃতীয় পক্ষের রাজনৈতিক ও সামরিক হস্তক্ষেপ এড়িয়ে দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বাশার আল-আসাদের শাসনের পতন সিরিয়ার জন্য একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হলেও দেশের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। বিশ্ব নেতাদের প্রতিশ্রুতি ও সমর্থন সিরিয়ার পুনর্গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে দেশটির অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও নেতৃত্ব নির্ধারণই স্থিতিশীলতার মূল চাবিকাঠি।