দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি: উত্তেজনা ও রাজনৈতিক সংকট
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সামরিক আইন জারি করেছেন, যার ফলে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে দায়িত্ব নিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল পার্ক আন-সু। সামরিক আইন ঘোষণার পর থেকে দেশজুড়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের ভাষণ ও সামরিক আইন জারির কারণ
মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল বলেন, “উদারপন্থী দক্ষিণ কোরিয়াকে উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট বাহিনীর হুমকি থেকে রক্ষা করতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি নির্মূল করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তবে উত্তর কোরিয়ার হুমকি সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট কোনো উদাহরণ তিনি দেননি।
- অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব: সামরিক আইন জারির ঘোষণার সময় দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টি ও বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে তুমুল বাজেট বিরোধ চলছিল।
- বিরোধীরা দেশের বাজেটে কাটছাঁট করে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম যেমন মাদকবিরোধী অভিযান ও জননিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ কমিয়ে দেন। এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন যে দেশটি মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হতে পারে।
পার্লামেন্ট ঘিরে উত্তেজনা
সামরিক আইন জারির পর সিউলের জাতীয় পরিষদ ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে বিক্ষোভ শুরু হয়।
- বিক্ষোভকারীদের দাবি:
- প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের স্লোগান।
- সামরিক আইনের অবসান।
- সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ: পার্লামেন্ট ভবনে সেনাসদস্যদের প্রবেশ এবং হেলিকপ্টারের অবতরণ পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
পার্লামেন্টে সামরিক আইনের বিরুদ্ধে ভোট
সেনা ঘেরাওয়ের মধ্যেও ১৯০ জন আইনপ্রণেতা নিরাপত্তা বাহিনীকে এড়িয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। তাঁরা সামরিক আইনের বিরুদ্ধে ভোট দেন।
- সংবিধান অনুযায়ী প্রক্রিয়া: দক্ষিণ কোরিয়ার ৩০০ সদস্যের পার্লামেন্টে অধিকাংশ সদস্য চাইলে সামরিক আইন তুলে নেওয়া সম্ভব। তবে বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে এই ভোট কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
প্রেসিডেন্টের সংকট ও জনসমর্থন
- বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা: পার্লামেন্টে বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল চাপে রয়েছেন।
- জনসমর্থন কমে যাওয়া: অর্থনৈতিক সংকট ও স্ত্রী কিম কেওন হিকে ঘিরে বিতর্কের কারণে প্রেসিডেন্টের জনসমর্থন তলানিতে। সাম্প্রতিক গ্যালাপ জরিপে তাঁর সমর্থন মাত্র ১৯ শতাংশ।
সামরিক আইন জারির ঘটনাটি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করেছে। বিরোধীদের সমন্বিত প্রচেষ্টা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।