ভারতের দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর: আসিফ নজরুল
বাংলাদেশে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড এবং তা নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল একটি সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন। তিনি ভারতের বাংলাদেশের বিষয়ে “অযাচিত উদ্বেগ” প্রকাশকে দ্বিচারিতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, ভারতের অবস্থান এবং এর প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ।
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। চিন্ময়ের গ্রেপ্তার এবং জামিন বাতিলের বিষয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিয়ে একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা এই ইস্যুতে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আসিফ নজরুলের বক্তব্য
অধ্যাপক আসিফ নজরুল ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ভারতের উদ্বেগকে “অযাচিত” এবং “দ্বিচারিতা” বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন:
- ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর “নির্মমতার অসংখ্য ঘটনা” ঘটছে, অথচ সে বিষয়ে ভারতের কোনো “সংকোচ বা অনুশোচনা” নেই।
- বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দুর্গাপূজা উপলক্ষে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
- ভয়েস অব আমেরিকার জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু সুরক্ষায় আগের সরকারের তুলনায় সফল।
তিনি আরও বলেন, সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের পরও বাংলাদেশের মুসলমানরা সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারত সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এই ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, লুটপাট, মন্দির ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছে।
- পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
- বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী: এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন।
মূল বিষয়
- বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
- ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের পরিস্থিতি এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে ভারতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
- বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপকে সামনে আনা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্য মন্তব্য এবং প্রতিক্রিয়া পারস্পরিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। ভারতের উদ্বেগ এবং বাংলাদেশের সমালোচনা—উভয়ের ক্ষেত্রেই গঠনমূলক আলোচনা প্রয়োজন। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ইতিবাচক দিক তুলে ধরলেও, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।