অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল
ইসরায়েল ও লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের একটি অত্যন্ত উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে বড় একটি পদক্ষেপ। ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার রাতে এ যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত। তবে, এটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নীতিগতভাবে এই পরিকল্পনাটি অনুমোদন করেছেন। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেবেন।
যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা:
এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রাথমিকভাবে দুই মাসের জন্য কার্যকর হবে, তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী এই মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে। ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে, এই যুদ্ধবিরতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। বিশেষভাবে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় এবং তাদের উদ্যোগে সম্ভব হয়েছে। তবে, অঞ্চলটির অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, দুই দেশই এ বিষয়ে বেশ সতর্ক রয়েছে, কারণ যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা পুরো পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
যুদ্ধের ইতিহাস:
এ যুদ্ধের শুরু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন ইসরায়েল গাজার উপর আগ্রাসন শুরু করে। এরপর থেকেই হামাস ও ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে হিজবুল্লাহ। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ সংঘাত গত সেপ্টেম্বরে আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ইসরায়েল লেবাননে অভিযান শুরু করে এবং হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কয়েকজনকে হত্যা করে, যার মধ্যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান হাসান নাসরুল্লাহও ছিলেন। এখন পর্যন্ত লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩,৭৬৮ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, গাজাতেও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রেখেছে, যেখানে নিহতের সংখ্যা ৪৪,২৪৯ জনে পৌঁছেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির ব্যাপারে তারা খুব কাছাকাছি চলে এসেছে, তবে কিছু চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। এর আগে, সোমবার রাতে একটি লেবানিজ কর্মকর্তা আশা করেছিলেন যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হতে পারে।
যদিও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা উজ্জ্বল, তবে অঞ্চলটির জটিল পরিস্থিতি ও ইতিহাসের কারণে যে কোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে। ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে শত্রুতা এত দীর্ঘ এবং তীব্র যে, যে কোনো সঙ্কট বা ভুল বোঝাবুঝি নতুন করে সংঘাত শুরু করতে পারে। তবে, এই যুদ্ধবিরতি যদি কার্যকর হয়, তাহলে এটি দীর্ঘদিনের চলমান সহিংসতার এক বিশাল বিরতি হতে পারে, যা অঞ্চলটির শান্তির পথে একটি বড় পদক্ষেপ।