January 10, 2025
অবশেষে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা নিয়ে মুখ খুললেন সালমান

অবশেষে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা নিয়ে মুখ খুললেন সালমান

নভে ২৬, ২০২৪

কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলা ভারতীয় বলিউড সুপারস্টার সালমান খানের জীবনে একটি কঠিন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার প্রভাব দীর্ঘকাল ধরে তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ১৯৯৮ সালে রাজস্থানে দুইটি কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার ঘটনায় সালমান খানের নাম উঠে আসে, যা এখনো তার বিরুদ্ধে এক জটিল আইনি ও সামাজিক চাপ সৃষ্টি করছে। যদিও প্রমাণ হিসেবে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি যে সালমান এই হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন, তবে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দাবি এবং তার মৃত্যুর হুমকি এই বিষয়টি আরও জটিল করেছে।

গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইর হুমকি

লরেন্স বিষ্ণোই এবং তার গ্যাংয়ের সঙ্গে সালমান খানের শত্রুতা মূলত ওই ১৯৯৮ সালের কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার ঘটনার পর থেকেই শুরু। বিষ্ণোই সম্প্রদায় কৃষ্ণসার হরিণকে পবিত্র প্রাণী হিসেবে পূজা করে এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই প্রাণী হত্যা একটি গুরুতর অপরাধ। সালমানকে এই হত্যার জন্য দায়ী করে বিষ্ণোই গ্যাং সালমানকে বারবার প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। বিশেষ করে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সালমানের বাড়ির সামনে গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিষ্ণোই গ্যাংয়ের হাত থাকতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে।

‘বিগ বস’ শোতে সালমানের প্রতিক্রিয়া

এত দিন পরও কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার বিষয়টি সালমানের জীবনে এক বিশাল রকমের চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি “বিগ বস” শোয়ের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে পুরনো কৃষ্ণসার হত্যা মামলা নিয়ে সালমান খান কথা বলছেন। ওই ভিডিওতে সালমান একটি পুরনো পুলিশ স্টেশন ক্লিপিং সম্পর্কে কথা বলেন, যেখানে তাকে পুলিশ স্টেশনে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘‘যদিও আমি ওই ঘটনাতে জড়িত ছিলাম না, তবুও পুলিশ স্টেশনে বসে থাকার যে দৃশ্য দেখেছি, সেটা নিজের কাছে অস্বস্তিকর লাগে। আমি বুঝতে পারি, তখন খুবই তরুণ ছিলাম এবং অসংযতভাবে বসেছিলাম।’’ এখানে সালমান তার যুবক বয়সের ভুল ধারণা ও আচরণকে স্বীকার করেছেন, এবং নিজের উন্নতির কথা বলেছেন।

সালমানের বক্তব্য: বদলানো সম্ভব নয় হাঁটাচলা

সালমান আরো বলেন, ‘‘আমার হাঁটাচলার ধরন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, এটা আমার স্বভাব। আমার কথা বলার ধরন হয়তো অহংকার বা বদমেজাজি মনে হয়, কিন্তু তা আসলে নয়।’’ সালমান মনে করেন, তার আচরণের মধ্যে কিছুটা খারাপ ধারণা ছড়িয়ে পড়তে পারে, তবে এটি তার ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং আত্মবিশ্বাসের অংশ। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘আপনার সামনে আপনার থেকেও জোরে কথা বলতে পারি, তবে সেটা আমি করি না।’’ এটি তার ব্যক্তিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যেখানে তিনি নিজের আচরণ ও কথা বলার স্বাধীনতার কথা তুলে ধরেছেন, যদিও সেটি কখনও কখনও নেতিবাচকভাবে দেখা হয়।

কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা: বলিউড তারকাদের শিকার

১৯৯৮ সালে সালমান খান, সাইফ আলি খান, সোনালি বেন্দ্রে, নীলম এবং টাবুরা ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিংয়ের জন্য রাজস্থানে একটি শিকারে গিয়েছিলেন। ওই সময় তারা কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা করেন, যা বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে একটি বড় বিতর্কের জন্ম দেয়। এই ঘটনার পর থেকেই সালমানের ওপর বিষ্ণোই গ্যাংয়ের ক্ষোভ বেড়ে যায়। এই ক্ষোভের মূল কারণ ছিল, গ্যাংয়ের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই হরিণদের হত্যা করা ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ।

আইনগত পরিস্থিতি

সালমানের বিরুদ্ধে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় দীর্ঘ সময় ধরে আইনি লড়াই চলে, যদিও তার বিরুদ্ধে সরাসরি প্রমাণ এখনো প্রাপ্ত হয়নি। সালমান খানকে ২০০৬ সালে একটি টিউবলাইট (দ্বিতীয় শ্রেণির) পশু হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, কিন্তু পরে তা কিছু পরিবর্তন ও আপিলের মাধ্যমে তার পক্ষে চলে আসে। তাছাড়া, তাকে আরো বেশ কিছুবার হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে, বিশেষত লরেন্স বিষ্ণোইর তরফ থেকে। তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত মামলার ভিত্তিতে বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্যও উঠে এসেছে।

সালমান খানের কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততা সম্পর্কে যেসব সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তা তাকে বারবার আইনি ও সামাজিক চাপে ফেলে রেখেছে। বিষ্ণোই গ্যাংয়ের হুমকি, ১৯৯৮ সালের শিকার, এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গুলিবর্ষণের ঘটনা এ বিষয়টিকে আরো জটিল করেছে। তবুও, সালমান খানের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে তা তার নিজের আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত পরিবর্তনের প্রতিফলন। নিজের অতীতকে ভুল স্বীকার করে তিনি বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন, যার মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্বের অন্য এক দিক প্রকাশ পাচ্ছে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে সালমানের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা আইনি প্রমাণের মাধ্যমে খণ্ডন করা। এছাড়া, গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি তাকে সশস্ত্র হুমকির মুখে রেখেছে। অতএব, যদিও তিনি এই পরিস্থিতিতে সঙ্গতিপূর্ণ থাকবেন, তার বিরুদ্ধে থাকা পুরনো অভিযোগগুলোর প্রভাব হয়তো কখনোই কমবে না।

Leave a Reply