December 23, 2024
৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি, বলছেন অধ্যক্ষ

৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি, বলছেন অধ্যক্ষ

নভে ২৬, ২০২৪

রাজধানী ঢাকা, বিশেষত যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে অবস্থিত ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, গতকাল সোমবার একটি সহিংস হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এই হামলায় অংশ নেয়, যেখানে কলেজের ভেতরে ব্যাপক লুটপাট এবং ভাঙচুর চালানো হয়। এই ঘটনায় অন্তত ২৫ জন আহত হন, যাদের মধ্যে ২০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরবর্তীতে, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত:

এই সহিংসতার সূচনা ঘটে গত রবিবার, যখন ‘ভুল চিকিৎসায়’ এক শিক্ষার্থী, অভিজিৎ হাওলাদার, মৃত্যুর অভিযোগে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে হামলা চালিয়েছিল। এই হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সোমবার, ২৫ নভেম্বর, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা “প্রতিশোধ” নেওয়ার উদ্দেশ্যে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালায়।

হামলা ও সংঘর্ষ:

দুপুর ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার মোড় দিয়ে মোল্লা কলেজে পৌঁছায় এবং এরপর কলেজের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তাদের এই হামলার পর মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা হামলাকারীদের ধাওয়া দেন, ফলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যা প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে। এতে প্রায় ২৫ জন আহত হন।

হামলার ভয়াবহতা:

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, কলেজের বিভিন্ন দফতর, শ্রেণিকক্ষ, এবং ল্যাবরেটরিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। আসবাবপত্র, কাঁচের জানালা ভাঙা হয়েছে, এবং কলেজের ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়। হামলাকারীরা কলেজের ছাত্রদের সনদ, ২০-৩০টি ল্যাপটপ এবং অনেক মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে।

পুলিশ ও প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া:

এই ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছে, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা, যেখানে ছাত্রদের রূপে দুষ্কৃতকারীরা অংশ নিয়েছিল। পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ছালেহ উদ্দিন বলেন, “অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই হামলা চালিয়েছে।” তিনি জানান, হামলায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে।

এছাড়া, পুলিশ জানায়, হামলার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিহতের তথ্য ছড়িয়ে পড়লেও, সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে এবং এ ধরনের অপপ্রচারে অংশ না নিতে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, হামলার জেরে আরও বড় সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।

রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া:

রাজধানীতে সংঘর্ষ এবং কলেজগুলোর মধ্যে সহিংসতা সৃষ্টির পর, সরকার এবং প্রশাসন এই ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক অস্থিরতার অংশ হিসেবে দেখছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এই সহিংসতা কোনো না কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

এদিকে, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সরকার হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, “এসব কার্যক্রম সহ্য করা হবে না, এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

হামলার পেছনে কারণ:

আক্রমণের পেছনে মূলত “প্রতিশোধ” এবং পূর্ববর্তী হামলার প্রতিকার ছিল। শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছে, গত রবিবার তাদের কলেজে হামলার জবাবে তারা মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় অনেক মূল্যবান সামগ্রী, যেমন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, বৈদ্যুতিক পাখা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম লুট করা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ:

সরকার ও পুলিশ বলেছে, যেকোনো ধরনের সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে। একই সঙ্গে কলেজগুলোর মধ্যে সংঘাতের কারণে ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও সহিংসতা হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

এছাড়া, ছাত্র আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ভূমিকা পালনকারী ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বৈঠকও হয়েছে, যেখানে তারা চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনের বিষয়ে আলোচনা করেছে।

এটি একটি রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিবেশের মধ্যে ঘটে চলা সহিংসতার একটি বড় উদাহরণ। একদিকে যেখানে ছাত্রদের মধ্যে শত্রুতা ও সহিংসতা চলছে, অন্যদিকে প্রশাসন এবং সরকার এই সহিংসতা নির্মূল করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। এটি দেশের কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাতের গভীর সংকেত দেয় এবং সামগ্রিকভাবে দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি করছে।

প্রধানত, এই সহিংসতা এবং হামলাগুলির মধ্যে একটি বিস্তৃত সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা, যা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেশের বৃহত্তর পরিস্থিতিতেও তার প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a Reply