পরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গত কয়েক দিনের বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের ঘটনাগুলোর পিছনে একটি বড় ধরনের পরিকল্পনা থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য নানান পক্ষ চেষ্টা করছে। সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব ঘটনা শুধু কাকতালীয় নয়, বরং একে অপরকে সমর্থনকারী একাধিক পক্ষের জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
১. ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনায় সরকারের অবস্থান
ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গতকাল, ২৫ নভেম্বর, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ এবং মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা একে অপরকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এই হামলার প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, “এ ধরনের সহিংসতা দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হস্তক্ষেপ করার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।”
গোটা পরিস্থিতির ওপর সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদ ব্রিফিংয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, “এতগুলো হামলা এক দিনে ঘটলে সেটা কাকতালীয় হতে পারে না। এটা পরিকল্পিত চেষ্টা বলে মনে হচ্ছে।”
২. পুলিশের ভূমিকা এবং ব্যবস্থার সমালোচনা
এ ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, পুলিশের কার্যক্রমে দুর্বলতা ছিল, যা সংঘর্ষ এবং সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পুলিশ প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ এবং সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এজন্য পুলিশ বাহিনীতে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা, বলেন, পুলিশ তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলে শিক্ষার্থীরা আরও সহিংস হয়ে উঠতে পারত। তিনি বলেন, “এই ঘটনার পর পুলিশ বাহিনী পুনর্গঠনের মধ্যে রয়েছে এবং যেখানে ব্যর্থতা রয়েছে, সেখানে পরিবর্তন আনা হবে।”
৩. রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সরকারির প্রতিক্রিয়া
সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, দেশের চলমান পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্র চলছে। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যে আছি, এবং অনেকেই চান না যে সরকার সফলভাবে কাজ করুক।” তিনি আরও বলেন, “দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা, সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো—এই সবই আসলে একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।”
এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে আহ্বান জানানো হয়েছে যাতে তারা উত্তেজনা ও অস্থিরতার পরিস্থিতিকে শান্তিপূর্ণভাবে এবং ইতিবাচকভাবে মোকাবিলা করে। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে, যাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়।
৪. শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান
এই বিশৃঙ্খলার পর সরকার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা কোনো ধরনের সহিংসতা বা সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, বলেন, “সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীরা যেন শান্ত থাকে। অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো চেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে।”
৫. নতুন পদক্ষেপ এবং প্রশাসনিক পরিবর্তন
সরকার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ বাহিনীতে কিছু পরিবর্তন আনছে। পুুরো প্রশাসনেও কিছু পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যার লক্ষ্য স্থবিরতা কাটিয়ে কার্যকরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা।
এছাড়া, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে আটক করার বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সরকার জানিয়েছে, তাকে আটক করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি সাধারণত দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি প্রতিফলন। যখন কোনো একটি রাজনৈতিক দল বা পক্ষের বিরুদ্ধে সামাজিক বা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তখন সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটানো হতে পারে, যা সরকার বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের মনোভাবকে প্রভাবিত করার জন্য একটি পরিকল্পিত প্রয়াস হতে পারে। যেহেতু শিক্ষার্থীরা সচরাচর আন্দোলনকারী শক্তি হিসেবে পরিচিত, তাদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের সহিংসতা ঘটানো সহজ হতে পারে। তবে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন।
পুলিশের ভূমিকা এবং প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া পুরো পরিস্থিতির উপর বড় প্রভাব ফেলবে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, সরকার কঠোর আইন প্রয়োগে যাবে এবং শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে বলে মনে হচ্ছে।