দুপুরে শপথ নেবেন সিইসিসহ নতুন নির্বাচন কমিশনাররা
নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনসহ নতুন ৪ নির্বাচন কমিশনারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন হলো। এই প্রসঙ্গে একটি বিশ্লেষণ করা যাক:
১. নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন:
গত ২১ নভেম্বর ইসি গঠনে একটি সার্চ কমিটির সুপারিশে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ পান। সিইসি ও কমিশনারদের মধ্যে অভিজ্ঞতার সমন্বয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেহেতু সবাই সরকারি প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন।
২. নিয়োগের প্রক্রিয়া:
নতুন ইসি গঠনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ, বিশেষত সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচিত সদস্যদের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার পর তা থেকে নির্বাচন কমিশনারদের নাম চূড়ান্ত করা হয়। এটি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, তবে কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন যে এটি আরও নিরপেক্ষ হতে পারতো যদি নির্বাচিত সদস্যরা আরো বৈচিত্র্যময় বা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে আসতেন।
৩. ইসি গঠনে সার্চ কমিটির ভূমিকা:
ইসি গঠনে একটি সার্চ কমিটি দায়িত্ব পালন করেছে, যার সদস্যরা উচ্চ আদালতের বিচারক, সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অন্যান্য অভিজ্ঞ পেশাজীবী। এই কমিটির কাজ ছিল এমন একজন কমিশন নির্বাচন করা যারা নির্বাচন কমিশন পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ এবং দক্ষ। সার্চ কমিটির ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা নির্বাচন কমিশন গঠনে একজন নিরপেক্ষ এবং সৎ দলের নির্বাচন নিশ্চিত করতে সহায়তা করেছে।
৪. নির্বাচন কমিশনের নতুন পদক্ষেপ:
নতুন নির্বাচন কমিশন যেহেতু শপথ নিতে যাচ্ছে, তাই তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হল আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করা। বিশেষত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ এবং নির্বাচনী অনিশ্চয়তা মাথায় রেখে ইসি’র নিরপেক্ষতা এবং দক্ষতা নিয়ে আলোচনা হতে থাকে। এই নতুন কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হয়, তবে এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।
৫. নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্বেগ:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। অনেক সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে থাকে, বিশেষ করে যখন তারা মনে করে যে কমিশন সরকার পক্ষের হয়ে কাজ করতে পারে। এবারের কমিশন গঠন কেমন হয়, তা রাজনৈতিক পরিবেশের উপর নির্ভর করবে। নতুন কমিশনের কার্যক্রম সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হলে তা জনগণের আস্থা অর্জন করতে সাহায্য করবে।
৬. সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:
বর্তমানে দেশের রাজনীতি তীব্র উত্তেজনায় ভরা, বিশেষ করে নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনায়। বিরোধী দলগুলো নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রাখতে না পারার কারণে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়। নতুন কমিশনের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ তাদের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন পরিচালনা নয়, বরং বিরোধী দলের আস্থা অর্জনও।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে এর সফলতা নির্ভর করবে তাদের কার্যক্রমের ওপর। কমিশন যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সক্ষম হয়, তবে সেটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক হতে পারে।