রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত হানতে বাধ্য হব: পুতিনের হুঁশিয়ারি
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যেসব দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে, তিনি সেই সব দেশগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক আঘাত হানতে বাধ্য হবেন। বৃহস্পতিবার রাতে এক ভাষণে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। পুতিন জানান, এই অস্ত্র সরবরাহের ফলে ইউক্রেনের আক্রমণ রুশ সীমান্তে পৌঁছেছে এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া একেবারে আইনসঙ্গত।
ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র সরবরাহ:
পুতিন চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কর্তৃক সরবরাহকৃত দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি রুশ সীমান্তে নিক্ষেপ করা হয়েছে, যা রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে, মস্কোর পক্ষ থেকে এসব অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর অধিকার রয়েছে।
ব্রিটেনের মন্তব্য:
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কেলিন বৃহস্পতিবার লন্ডনে বলেন, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং ন্যাটোর সমর্থন ছাড়া রুশ সীমান্তে এই ধরনের হামলা হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ব্রিটেনের সহায়তা ছাড়া ইউক্রেন এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারত না।
হোয়াইট হাউসের পাল্টা প্রতিক্রিয়া:
এদিকে, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জিন-পিয়েরে পুতিনের এই মন্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, রাশিয়া নিজেই উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়া যে উত্তর কোরীয় সৈন্য মোতায়েন করছে এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পিছনে রাশিয়ার ভূমিকা রয়েছে, তা ইউক্রেনীয় আক্রমণকে আরও উসকে দিয়েছে।
পুতিনের হুঁশিয়ারি: যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হতে পারে:
পুতিন সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এখন বিশ্বব্যাপী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য যখন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে, তখন তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি ভূমিকা নিচ্ছে। এই কারণে রাশিয়া বিশ্বকে আরও বড় সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে বাধ্য হবে।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার:
পুতিন জানান, রাশিয়া মার্কিন ও ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে নতুন ধরণের হাইপারসনিক মাঝারি পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তিনি আরও বলেন, এই ধরণের পাল্টা জবাব দেওয়া হবে, তবে এর আগে বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক করা হবে যাতে তাদের কোনো ক্ষতি না হয়।
সম্প্রতি ইউক্রেনের আক্রমণ:
পুতিনের ভাষণের পটভূমিতে, ইউক্রেন ১৯ নভেম্বর মার্কিন-নির্মিত ছয়টি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২১ নভেম্বর ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে। এসব আক্রমণের পর পুতিন জানান, রাশিয়া বাধ্য হয়ে পাল্টা হামলা চালিয়েছে এবং এসব আক্রমণের জন্য অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে।
বিশ্বে উত্তেজনা বৃদ্ধি:
এখন পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। পশ্চিমি দেশগুলোর অস্ত্র সরবরাহের ফলে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে এই নতুন সংঘাতের ফলে গণমাধ্যম ও বিশ্ব নেতারা যুদ্ধের পারমাণবিক বিপদ এবং বিশ্ব শান্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই হুঁশিয়ারি শুধু ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। পশ্চিমি দেশগুলোর অস্ত্র সরবরাহ এবং রাশিয়ার পাল্টা আক্রমণ এই যুদ্ধকে বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।