গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার ছাড়াল, হামলা অব্যাহত
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর থেকে নিহতদের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৫৬ জন ছাড়িয়েছে। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে। হামলার কারণে গাজার পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে এবং আহতদের সংখ্যা পৌঁছেছে ১ লাখ ৪ হাজার ২৮৬ জন।
উত্তর ও মধ্য গাজায় বিমান হামলায় ৮৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ড. হোসাম আবু সাফিয়া জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় রাতভর হামলায় আরও ৬৫ জন নিহত হয়েছেন, এবং ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। তিনি জানান, হাসপাতালের মেডিকেল টিম হাতে-হাতে উদ্ধার কাজ করছে, কারণ তাদের কাছে আধুনিক উদ্ধার সরঞ্জাম নেই। ড. সাফিয়া সতর্ক করে বলেছেন, যদি আন্তর্জাতিক সহায়তা না আসে এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম না পৌঁছায়, তবে তাদের হাসপাতালটি গণকবরে পরিণত হতে পারে।
মধ্য গাজায় বুধবার শেখ রাদওয়ান এলাকায় একটি বাড়িতে হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত হন, তাদের মধ্যে ১০ জনই শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ড. মুনির আলবুরশ জানান, নিহতদের উদ্ধার কাজ এখনও চলমান রয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে হতাহতের সংখ্যা:
ইসরায়েলি হামলার কারণে লেবাননে অন্তত ৩ হাজার ৫৮৩ জন নিহত হয়েছেন। আহতদের সংখ্যা ১৫ হাজার ২৪৪ জন। এই হামলা গত কয়েক সপ্তাহে ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পায়, এবং গাজার পাশাপাশি লেবাননেও গুরুতর মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,১৩৯ নিহত:
ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। হামাস সদস্যরা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে আক্রমণ চালিয়ে ওই সংখ্যক মানুষকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পদক্ষেপ:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিসি)। এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মাধ্যমে গাজার গণহত্যার দায়ে তাদের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
হামলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি:
ইসরায়েলি হামলা গাজার সাধারণ জনগণের উপর ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন সৃষ্টি করেছে, এবং এর ফলে শরণার্থী শিবির এবং চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা দ্রুত পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি:
গাজায় যেভাবে বিমান হামলা এবং স্থল অভিযান চলছে, তা দিয়ে বোঝা যায়, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং ইসরায়েলের পাল্টা হামলার ফলে পুরো অঞ্চলে মানবিক সংকট বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা আরও তীব্র করে তুলছে।
সামগ্রিকভাবে, এই সংঘাতের ফলে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্ব মানবাধিকার ইস্যুগুলোর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে, এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা অপরিহার্য হয়ে উঠছে।