পূর্বসূরিদের বদনাম ঘোচানোর চ্যালেঞ্জ
এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ, নতুন কমিশন গঠন
বাংলাদেশের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার হিসেবে চারজন নতুন সদস্য নিয়োগ পেয়েছেন। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) এই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কমিশনের নতুন সদস্যরা হলেন— মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাছউদ, তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
নতুন কমিশনের অধীনে আগামী পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য নির্বাচন পরিচালিত হবে।
নতুন কমিশন:
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং তথ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০ সালে অবসরপ্রাপ্ত এ আমলাকে বর্তমানে ইন্টারিম সরকারের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
নাসির উদ্দীনের পৈতৃক বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়াতে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি ছাত্র ছিলেন।
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের জানান, ভোটাধিকার প্রয়োগে জনগণের যে বাধার সম্মুখীন হওয়ার বিষয়টি ছিল, তা দূর করাই তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তিনি বলেন, “মানুষ মুক্ত পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তা পারেনি। আমার লক্ষ্য সেই ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা।”
নতুন কমিশনারদের মধ্যে:
- আবদুর রহমানেল মাছউদ: তিনি ২০১৭ সালে ঢাকা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি নির্বাচন আইন, দুর্নীতি দমন আইন, ফৌজদারি কার্যবিধি নিয়ে বহু বই রচনা করেছেন।
- মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার: তিনি অবসর নেওয়ার আগে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন।
- তহমিদা আহমদ: তিনি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ: তিনি পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
নির্বাচনে আস্থা ফিরিয়ে আনা চ্যালেঞ্জ:
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক অনিয়ম এবং জালিয়াতির অভিযোগ থাকায় ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনা নতুন কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জ। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে এবং স্থানীয় নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, যার ফলে সাধারণ মানুষ ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অধীনে গঠিত নতুন কমিশন হয়তো কাজ করার জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ পাবে।
কমিশনের প্রথম কাজ:
এদিকে, নতুন কমিশন গঠনের পর আগামী রোববার নবনিযুক্ত পাঁচ কমিশনারের শপথ গ্রহণ হবে। সুপ্রিম কোর্ট লাউঞ্জে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ শপথ পাঠ করাবেন।
আগের কমিশন ও নির্বাচনের পরিস্থিতি:
পূর্ববর্তী কমিশন, কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। বিশেষ করে, বিএনপি এবং অন্যান্য সরকারবিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাচন হয়েছিল, যা একতরফা ও ডামি নির্বাচনের তকমা পেয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর, সরকার পতনের মুখে সরকার বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনীতিতে বিভিন্ন মতামত থাকলেও, নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন:
গত বুধবার রাষ্ট্রপতির কাছে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি ১০ জনের প্রস্তাবিত তালিকা পাঠিয়েছিল, এর মধ্যে ৫ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। আগের সার্চ কমিটির সদস্যরা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করলেও, এবারের সার্চ কমিটি সেটি করেনি।
এছাড়া, বিএনপি দলও নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ কামনা করেছে এবং তাদের তালিকায় এ এম এম নাসির উদ্দীনের নাম ছিল, যা তার নিয়োগে সাহায্য করেছে।
এদিকে, তহমিদা আহমেদ এবং আবদুর রহমানেল মাছউদ সহ নির্বাচিত কমিশনাররা নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুস্থ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য কাজ করবেন।