হত্যা মামলায় সাংবাদিকদের জড়ানো নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্য স্বাগত জানাল আরএসএফ
জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঘটনায় সাংবাদিকদের নাম সংশ্লিষ্ট একটি হত্যামামলার বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। সংস্থাটি ড. ইউনূসের মন্তব্যকে এক ধরনের উৎসাহব্যঞ্জক সরকারি ঘোষণা হিসেবে তুলে ধরে, একই সঙ্গে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
ড. ইউনূসের বক্তব্য:
ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বুধবার দ্য ডেইলি স্টার-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানান, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া হত্যা মামলার মধ্যে ১৪০টির বেশি সাংবাদিকের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়াকে তিনি “পুরোনো আইন ও চর্চার ফল” হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, তাড়াহুড়ো করে মামলা দায়েরের কারণে এমনটি ঘটেছে। ড. ইউনূস এই মামলার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এবং মামলা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছেন।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এর প্রতিক্রিয়া:
আরএসএফ ড. ইউনূসের এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটি একটি উৎসাহব্যঞ্জক পদক্ষেপ, যা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধমূলক’ মামলা এবং নিপীড়নের অবসান ঘটাতে সহায়তা করতে পারে। আরএসএফ মনে করে, ড. ইউনূসের মন্তব্যগুলো সম্ভাব্যভাবে সেসব সাংবাদিকের জন্য আশার বার্তা হতে পারে, যারা সম্প্রতি নানা ধরনের আইনি ও প্রশাসনিক হুমকির মুখে পড়েছেন।
সাংবাদিকদের প্রতি চাপ:
আরএসএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে ১৪০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে, এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এ পরিস্থিতি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে প্রায় ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে, যা তাদের কাজ করতে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে ড. ইউনূস দাবি করেছেন, এসব কার্ড বাতিল হলে সাংবাদিকদের কাজ করার সুযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হবে না, শুধুমাত্র সরকারি দপ্তরগুলোতে তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত হবে।
স্বচ্ছ ও অরাজনৈতিক পদ্ধতির আহ্বান:
আরএসএফের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান সিলিয়া মার্সিয়া অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বরাদ্দ এবং বাতিলের বিষয়ে স্বচ্ছ এবং অরাজনৈতিক পদ্ধতি অনুসরণের গুরুত্বের কথা বলেছেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে এই প্রক্রিয়া আরও সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হতে হবে।
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক মামলা এবং একতরফা প্রশাসনিক পদক্ষেপের বিষয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্য অনেকটা আশার আলো হিসেবে দেখা যেতে পারে, তবে তার বক্তব্যের বাস্তবায়ন এখনই নিশ্চিত নয়। আরএসএফ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা সরকারের পক্ষ থেকে কাঠামোগত সংস্কার এবং সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছে।