যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া মুখোমুখি, লড়াইয়ের আশঙ্কা
ইউক্রেনের সাথে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে পৌঁছেছে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। ইউক্রেন মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এটিএসিএমএস (ATACMS) ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর পর, রাশিয়া ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখানোর হুমকি দিয়েছে। এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি ভূমিকা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহারে অনুমোদন দেয়ায় দুই পরাশক্তির মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, কারণ মস্কো একে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা হিসেবে বিবেচনা করছে, এবং এর ফলে আরও চরম পাল্টা হামলার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার উত্তেজনা:
- হটলাইন বন্ধ: যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যে বিশেষ হটলাইন ছিল, তা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। ১৯৬৩ সালে এই হটলাইন চালু করা হয়েছিল যুদ্ধের সময় গোপন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে, যাতে ভুল বোঝাবুঝি এড়িয়ে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করা যায়। তবে বর্তমানে এটি কাজ করছে না, যা বিশ্বের কাছে পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
- মার্কিন দূতাবাস বন্ধ: যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে, যা পরিষ্কারভাবে সংকেত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক এখন সবচেয়ে সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। কিয়েভে বোমা হামলার আশঙ্কায় মার্কিন কর্মকর্তাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া:
- পারমাণবিক অস্ত্রের নীতি: রাশিয়া সম্প্রতি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতিমালা পরিবর্তন করেছে, যা যুদ্ধের তীব্রতার জন্য আরও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের একের পর এক ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পারমাণবিক সংঘাতের শঙ্কাকে তীব্র করেছে।
- রাশিয়ার আক্রমণ: মস্কো জানিয়েছে, ইউক্রেনের এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পর, তারা যদি এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালায়, তবে তা শুধুমাত্র ইউক্রেনের আক্রমণ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলা হিসেবে গণ্য করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ:
- নতুন অস্ত্র সহায়তা: যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আরও ২৭৫ মিলিয়ন ডলার অর্থ এবং অস্ত্র সহায়তা প্রদান করতে যাচ্ছে, যার মধ্যে স্থলমাইন (landmines) এবং রকেট সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত। যদিও স্থলমাইন ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্তে মানবাধিকার সংস্থাগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান একে “বড় ভুল” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন অনুযায়ী:
- রাশিয়ার আঞ্চলিক লাভ: রাশিয়া ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা দ্রুত গতিতে দখলে নিচ্ছে, এবং নতুন বছরের শুরুতে রাশিয়া পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ছয় গুণ বেশি এলাকা দখলে নিতে পারে। এতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে তাদের অর্জিত ভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী প্রভাব:
- আর্থিক মন্দা: ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বের বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক দেশের অর্থনীতিতে সংকট দেখা দিয়েছে।
- মানবিক সঙ্কট: যুদ্ধের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে, হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। পুরো ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
বিশ্লেষণ:
- রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা: বর্তমানে যুদ্ধের মাপ এবং উত্তেজনা যা বেড়েছে, তা একদিকে মুখোমুখি সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বিশেষত, এটিএসএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সহযোগিতার ফলে, রাশিয়া যে কোনো ভুল পদক্ষেপে পারমাণবিক হামলা পর্যন্ত যেতে পারে।
- স্থলমাইন বিতর্ক: মানবাধিকার সংস্থাগুলো স্থলমাইন বিতরণকে চরম সমালোচনা করেছে। যদিও এটি ইউক্রেনের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করতে পারে, তবে এর ফলে ভবিষ্যতে বেসামরিক মানুষ আরও বেশি বিপদের মধ্যে পড়বে, কারণ স্থলমাইন দীর্ঘদিনের জন্য কার্যকর থাকে এবং বহু মানুষকে হতাহত করতে পারে।
- গোটা পরিস্থিতি: ইউক্রেন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই উত্তেজনা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এক বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে হটলাইন বন্ধ হওয়া এবং সরাসরি অস্ত্র সহায়তা প্রদান যুদ্ধের প্রস্তাবিত সমাধানকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:
- বিশ্ব যুদ্ধের আশঙ্কা: বর্তমানে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এতটাই উত্তেজনাপূর্ণ যে, পরবর্তী কোনও ভুল পদক্ষেপ বিশ্বযুদ্ধ অথবা পারমাণবিক সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
- ইউক্রেনের পরিস্থিতি: ইউক্রেনের অবস্থান এবং ভবিষ্যতে তারা কোথায় দাঁড়িয়ে থাকবে, তা নির্ভর করছে কতটুকু আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং অস্ত্র সহায়তা তারা পায়।
এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে, বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের উচিত যুদ্ধের স্থায়ী সমাধান খোঁজা, এবং আন্তর্জাতিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করা, যাতে সামরিক সংঘাতের পথ অব্যাহত না থাকে।