যুদ্ধবিরতির জন্য যেসব শর্ত দিতে পারেন পুতিন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে সম্মতি জানিয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে তিনি কোনো ধরনের ভূমি ছাড় দিতে রাজি নন। পুতিন আরও চান, ইউক্রেন যেন পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি পরিত্যাগ করে। এ বিষয়ে পাঁচটি সূত্র রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে, যারা ক্রেমলিনের চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে ধারণা রাখেন।
১. পুতিনের অবস্থান ও শর্ত:
- ভূখণ্ডের ব্যাপারে আপস নেই: পুতিন যেকোনো যুদ্ধবিরতিতে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করতে রাজি। বিশেষভাবে, রাশিয়া দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দাবি করছে এবং এসব অঞ্চলে রুশ বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। রাশিয়া অবশ্য ছোট কিছু অঞ্চল যেমন খারকিভ এবং মাইকোল্যাইভ থেকে সেনা সরানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে।
- ন্যাটো সদস্যপদ বাতিল: রাশিয়া একটি দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে যে, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা বাদ দিতে হবে। পুতিনের মতে, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
২. রুশ অবস্থান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা:
- ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সম্ভাবনা: রাশিয়া ট্রাম্পের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী, তবে পুতিন স্পষ্ট করেছেন যে, যেকোনো সমঝোতায় “রণক্ষেত্রের বাস্তবতা” প্রতিফলিত হতে হবে। এটি বোঝায় যে, রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলগুলো ফিরে পেতে চাইবে।
- অস্ত্র সরবরাহের উদ্বেগ: পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি শুধুমাত্র স্বল্পকালীন হলে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র সরবরাহ করতে সক্ষম হবে, যা রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এর পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত এবং সেই ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে।
৩. এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার:
- মস্কোর প্রতিক্রিয়া: ৭ নভেম্বর, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার সীমান্তে ব্যবহৃত হয়েছে। মস্কো এটিকে বড় ধরনের উস্কানি হিসেবে দেখছে, এবং পুতিনের ভাষ্যে, এর মাধ্যমে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আগ্রাসন আরো তীব্র হয়েছে।
- পুতিনের নীতিগত অবস্থান: পুতিন বলেছেন, রাশিয়া কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কথা বলতে প্রস্তুত রয়েছে, তবে এটি “সংঘাতের দীর্ঘস্থায়ী সমাধান” হতে হবে। তিনি মেনে নিয়েছেন যে, যদি নিরপেক্ষতা এবং স্বার্থের বিষয়টি সমাধান না হয়, তবে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়া কঠিন।
৪. রাশিয়ার আপোসের সীমা:
- ভূখণ্ডের প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান: রাশিয়া যেকোনো চুক্তিতে দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে আপস করতে রাজি নয়। এতে করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি আরো জটিল এবং দীর্ঘ হতে পারে।
- রাশিয়ার চলমান অবস্থান: পুতিনের মুখপাত্র, দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “যুদ্ধবিরতি সাময়িকভাবে স্থগিত করার কোনো কাজ হবে না”, যার মানে হলো, রাশিয়া যদি যুদ্ধবিরতি না পায়, তবে তারা লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত থাকবে।
৫. চলমান উত্তেজনা:
- সম্প্রসারণের আশঙ্কা: ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ২০২২ সালের পর থেকে আরও তীব্র হয়েছে, এবং সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেনের বেশ কিছু এলাকা দ্রুত দখল করছে। এসব অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। মস্কো ইউক্রেনের সঙ্গে কোনও চুক্তির জন্য আগ্রহী হলেও, তাদের দাবির পূরণ না হলে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, তবে রাশিয়ার শর্ত স্পষ্ট—ভূখণ্ডে কোনো ছাড়, ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান বাতিল এবং দীর্ঘমেয়াদী শান্তি চুক্তি ছাড়া তারা কোনো সমঝোতায় আসবে না। এছাড়া, পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র সরবরাহ এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির সময়সীমা নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান কঠোর, এবং তা ইউক্রেনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত উস্কানি সৃষ্টি করছে।