নির্বাচন নিয়ে সরকারের বক্তব্যে অসন্তোষ
নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই অসন্তোষ জানানো হয়। সভায় বিএনপির নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক ভাষণে সংসদ নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু না থাকায় সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে এবং সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।
১. বিএনপি নেতাদের অসন্তোষ:
- নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে কবে নাগাদ সেই রোডম্যাপ আসবে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। এ কারণে বিএনপির নেতারা মনে করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই, যা দলের মধ্যে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
- বিএনপির উদ্বেগ: বিএনপি নেতাদের মতে, সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করা হয়নি। সরকারের প্রধান লক্ষ্য যেহেতু নির্বাচন, সুতরাং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সংস্কারের অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন ছিল। এই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা না পাওয়ায় বিএনপি নেতারা অসন্তুষ্ট।
২. নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কারের দাবি:
- বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব: বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমে তারা কোনো বিরোধিতা করেন না। তবে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রতি সরকারের নজর দেওয়া উচিত। বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগের মধ্যে নির্বাচনী সংস্কারের বিষয়টি একেবারেই অনুপস্থিত, যা ভবিষ্যতে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য জরুরি।
- সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্টতা না থাকা: বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকারের নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কারের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান না নেওয়া তাদের ভাবনায় আরো সন্দেহ তৈরি করছে। তাদের দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বা পরিকল্পনা ঘোষণা না করার কারণে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
৩. বিএনপির কর্মসূচি:
- ৩১ দফা কর্মসূচি: বৈঠকে বিএনপি নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত যাওয়ার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিএনপি দলের ১০ বিভাগে কর্মশালা আয়োজন করবে, যেখানে দলের নেতা-নেত্রীরা জনগণের মধ্যে তাদের অবস্থান ও দাবিগুলো তুলে ধরবেন।
- নির্বাচন কমিশন ও সংস্কার প্রস্তাব: বৈঠকে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়। দলটি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা নির্বাচনী সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে নিজেদের প্রস্তাব পেশ করবে।
৪. বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কার সংক্রান্ত ভাবনা:
- রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে বিএনপির অবস্থান: বিএনপি নেতারা উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব বিষয় এখন জনসমক্ষে আনা হচ্ছে, তা আসলে বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েক বছর আগে বলা হয়েছে। তারা দাবি করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের কোনো সাংবিধানিক বা আইনি ম্যান্ডেট নেই, এবং এই সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ন্যূনতম সংস্কার হতে পারে। তবে, এই সংস্কারগুলো যদি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের শক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরো উন্নত করতে সাহায্য করবে।
৫. বিএনপির ভবিষ্যত কর্মসূচি ও অবস্থান:
- বিরোধী দলের আন্দোলন: বিএনপির নেতারা মনে করছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনী সংস্কারগুলোর গুরুত্ব বুঝতে হবে। তারা উল্লেখ করেন যে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু রাষ্ট্র সংস্কার এবং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা প্রয়োজন। বিএনপি কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।
- গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব: বিএনপি নেতারা দৃঢ়ভাবে মনে করেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য জনগণের আন্দোলন একমাত্র কার্যকর পন্থা হতে পারে। তাদের মতে, বর্তমান সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ না করে, একটি গণঅভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে সংসদ নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না পাওয়ায় দলের নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের কাজের মধ্যে নির্বাচন সংস্কারের বিষয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা উচিত ছিল, যা জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহের সৃষ্টি করছে। বিএনপি তাদের ৩১ দফা কর্মসূচি নিয়ে তৃণমূলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।