December 23, 2024
মানহানিসহ ড. ইউনূসের নামে করা ছয় মামলার কার্যক্রম বাতিল

মানহানিসহ ড. ইউনূসের নামে করা ছয় মামলার কার্যক্রম বাতিল

নভে ২১, ২০২৪

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা ছয়টি মামলার কার্যক্রম বাতিলের রায়টি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই মামলাগুলির মধ্যে পাঁচটি ছিল শ্রম আইনের অধীনে এবং একটি ছিল মানহানির অভিযোগে, এবং হাইকোর্টের পক্ষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ গত ২৪ অক্টোবর রায় প্রদান করে।

১. শ্রম আইনের মামলা:

  • প্রেক্ষাপট: ২০১৯ সালে, যখন ড. ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান ছিলেন, প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে উত্থাপিত একটি অভিযোগ ছিল। এই অভিযোগে কর্মীদের চাকরিচ্যুতির কারণে পাঁচটি মামলা করা হয়।
  • আবেদনকারীর যুক্তি: ড. ইউনূসের আইনজীবী সাফ জানিয়ে দেন যে, ট্রেড ইউনিয়নটির আবেদনপত্র শ্রম অধিদপ্তর থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল এবং চাকরিচ্যুতি ছিল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে। এছাড়া, শ্রম অধিদপ্তর মামলা করার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
  • রায়: হাইকোর্ট মামলাগুলির কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করেছে, কারণ মামলার পক্ষে কোনো বৈধ ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

২. মানহানির মামলা:

  • প্রেক্ষাপট: ২০০৭ সালে, ড. ইউনূস একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা টাকার জন্য রাজনীতি করেন, জনস্বার্থে করেন না,” যা জাসদের নেতৃবৃন্দের কাছে মানহানির অভিযোগ হিসেবে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এর ফলে, ময়মনসিংহ জেলা বারের সদস্য নজরুল ইসলাম চুন্নু মামলা করেন।
  • রায়: এই মানহানির মামলা থেকেও ড. ইউনূস মুক্তি পেয়েছেন, কারণ আদালত মামলার ভিত্তি অগ্রহণযোগ্য মনে করেছে।

৩. আইনগত যুক্তি:

  • ড. ইউনূসের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান বলছেন, মামলার কার্যক্রম বাতিলের পক্ষে তাদের মূল যুক্তি ছিল যে, শ্রম আইনের অধীনে মামলাগুলি বেসামরিক কারণে করা হয়েছিল এবং এর পেছনে কোনো বাস্তব প্রমাণ ছিল না। মামলাগুলোর ব্যর্থতা এবং শ্রম অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের কারণে এই মামলা গুলি অগ্রাহ্য হয়েছে।

৪. আইন ও বিচারব্যবস্থায় প্রভাব:

  • এই রায়টি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি উদাহরণ হতে পারে যে, যেখানে বিচারকদের পক্ষে তাদের সাবধানতা এবং ন্যায়সঙ্গত বিচারের গুরুত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা দায়ের করা হলেও আদালত তা মঞ্জুর করেনি।
  • এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক চাপ বা ব্যক্তিগত প্রতিশোধের উপরে চলে না এবং আইনি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে কাজ করে।

৫. ড. ইউনূসের অবস্থান:

  • ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এইসব মামলা তার সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানকে আরো জটিল করে তুলেছিল, কিন্তু হাইকোর্টের রায় তাকে এ থেকে মুক্তি দিয়েছে। এই রায়ের পর তিনি আরও জোরালোভাবে তার অবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন।

এটি একটি স্পষ্ট নির্দেশনা যে, আইনি ক্ষেত্রে অবশ্যই যথাযথ প্রমাণ এবং গ্রহণযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে, এবং আদালত সেই ভিত্তিতে মামলার কার্যক্রম বাতিল করতে পারে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তি যিনি নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত, তার বিরুদ্ধে যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা হয়, তবে আদালত সঠিকভাবে কাজ করেছে।

Leave a Reply