আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে ছাত্রনেতাদের চাপ
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষত বিএনপি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা, নিজেদের অবস্থান নিয়ে বিভক্ত। আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার প্রশ্নে দুটো বিপরীত অবস্থান তৈরি হয়েছে।
বিএনপি এবং তার সমমনা দলগুলো চাচ্ছে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হোক, তবে তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে। বিএনপি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে, এবং নির্বাচন পেছানো নয়, বরং অবিলম্বে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে। এর বিপরীতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আওয়ামী লীগকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তারা চান, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন বা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া হোক।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিএনপি নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই তার অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিএনপি সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে, তাই তিনি তার সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আনবেন না। এর ফলে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি ফের আলোচনায় উঠে আসে, যার কারণে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। তারা দাবি করেছেন, গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া যাবে না, এবং প্রয়োজনে “দ্বিতীয় অভ্যুত্থান” পর্যন্ত হতে পারে।
সরকার এবং ছাত্রনেতাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্বের মধ্যে, সরকারের প্রাধান্য হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে ১৫ বছর ধরে বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দল নিপীড়িত হয়েছে, এই বিষয়টি উল্লেখ করে ছাত্র আন্দোলন ও সরকার, উভয়ই সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের দিকে। আইনমন্ত্রী অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়ে দিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের বিচারের জন্য নতুন আইন তৈরি হচ্ছে, যা আদালতকে সুপারিশ করার ক্ষমতা দেবে, তবে তা সরাসরি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা দেবে না। এছাড়া, সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, সরকার সংস্কারের পরই নির্বাচন অনুষ্ঠানে আগ্রহী, তবে বিএনপি নির্বাচন তারিখ ও রোডম্যাপের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
এই পরিস্থিতিতে, সরকার এবং ছাত্রনেতাদের মধ্যে একটি তীব্র চাপ তৈরির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। ছাত্রনেতাদের মতে, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ দেওয়া হলে তা গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে। তারা দাবি করেছে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না হলে ২৪ সালের পরের বাংলাদেশে তার বিচার নিশ্চিত হতে হবে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, এই সংকটের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কি না, আর সেটা কোন ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাবে।