অধিনায়ককে শেষবিদায় জানাল মোহামেডান
মোহামেডান ক্লাবে শেষ শ্রদ্ধা: কিংবদন্তি ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টুর শেষ বিদায়
আজ মঙ্গলবার সকালে, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ছিল একেবারে নিথর এবং শোকে স্তব্ধ। এই ক্লাব ছিল জাকারিয়া পিন্টুর প্রিয় প্রাঙ্গন, এবং আজ এই প্রাঙ্গনে তিনি এসেছিলেন একেবারে শেষবারের মতো, কিন্তু প্রিয় ফুটবল মাঠে কোনো প্রাণ ছিল না। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক, কিংবদন্তি ফুটবলার পিন্টু সোমবার সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তার মৃত্যু ক্রীড়াঙ্গনসহ দেশের মানুষের হৃদয়ে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।
জানাজায় উজ্জ্বল শ্রদ্ধা ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা
আজ সকালে মোহামেডান ক্লাব প্রাঙ্গণে পিন্টুর মরদেহ রাখা হয়েছিল। সকাল ১০টায় শুরু হয় তার জানাজা। পিন্টুর দীর্ঘদিনের সতীর্থ, সহকর্মী, এবং ক্রীড়াঙ্গনের নানা মানুষ জানাজায় উপস্থিত হন। ঢাকার জেলা প্রশাসন থেকে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হয়। মোহামেডান ক্লাবের সমর্থকরা, ক্লাবের স্থায়ী সদস্যরা, এবং অলিম্পিক এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন ফেডারেশন পিন্টুর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। মোহামেডান ক্লাব মসজিদের ইমাম আওলাদ তার জানাজা পরিচালনা করেন।
আরও দুটি জানাজা
বেলা ১১টায় পিন্টুর আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে। বাদ জোহর তার তৃতীয় এবং শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবে। জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়, যেখানে তার প্রতি সম্মান জানাতে অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
পিন্টুর জীবন ও অবদান
জাকারিয়া পিন্টু ১৯৪৩ সালে নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক এবং এক সময় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কিংবদন্তি ফুটবলার। ১৯৬১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টানা খেলেছেন মোহামেডানে এবং ক্লাবটির কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন, এবং বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু
পিন্টু বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে এবং তিনি আকস্মিকভাবে পড়ে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়, কিন্তু তার আগেই তিনি চলে যান।
পিন্টুর অবদান
পিন্টু শুধু একজন ফুটবলার ছিলেন না, তিনি একজন সংগঠকও ছিলেন, যারা পরবর্তীতে ফুটবলকে আরও শক্তিশালী এবং উন্নত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তার জীবন এবং কর্ম দেশের ফুটবল প্রেমী মানুষদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
পিন্টুর অবদান ক্রীড়াঙ্গনে, বিশেষ করে বাংলাদেশের ফুটবলে, চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। তার মৃত্যু ফুটবল তথা ক্রীড়া জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি, যা কখনোই পূর্ণ হবে না।