December 23, 2024
গোহাটিতে অবস্থানের গুঞ্জন কাদেরের, হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা!

গোহাটিতে অবস্থানের গুঞ্জন কাদেরের, হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা!

নভে ১৮, ২০২৪

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বড় পরিবর্তন ঘটে, যখন গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার পতন হয় এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। তার দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে বেশিরভাগই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বা গা ঢাকা দিয়েছেন, আর অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পালানোর খবর নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার পালানোর গুঞ্জন এবং পরবর্তী ঘটনাগুলি নিয়ে একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা যায়।

রাজনৈতিক পটভূমি

৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর, আওয়ামী লীগ থেকে বেশ কিছু শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী এবং এমপি ভারতে পালিয়ে গেছেন, যারা মূলত সরকারের বিভিন্ন বিতর্কিত নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এসব নেতাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের অন্যতম। তার নাম গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সহিংসতা এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়নের সাথে তার নাম জড়িত। এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার পলায়নকে আরও জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। কাদেরের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা, তৎকালীন সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে বড় রাজনৈতিক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

পালানোর সময়সূচি ও গন্তব্য

৮ নভেম্বর রাতের গুঞ্জন অনুযায়ী, ওবায়দুল কাদের অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে গেছেন। পুলিশ তার স্ত্রীর ভাই নুরুল হুদার বাসায় অভিযান চালানোর পর, তার ভারত পালানোর খবর আরো শক্তিশালী হয়। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কাদের প্রথমে কলকাতায় পৌঁছান, তবে তার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি। তার পালিয়ে যাওয়ার পর নতুন গুঞ্জন সৃষ্টি হয় যে, তিনি আসামের গৌহাটির একটি হোটেলে অবস্থান করছেন।

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কাদের সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা থেকে তিনি প্রথমে মেঘালয়ের শিলংয়ে যান, যেখানে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন পলাতক নেতার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। পরে, কাদের গৌহাটিতে আশ্রয় নেন, কারণ সেখানে তার জন্য যোগাযোগের সুযোগ বেশি ছিল। শিলং ও গৌহাটি অঞ্চলগুলি থেকে শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার সুবিধা রয়েছে, যা তাকে সেখানে থাকার জন্য প্ররোচিত করেছে।

কাদেরের অবস্থান এবং তার লক্ষ্য

কাদেরের গন্তব্য ও অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানে শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ এবং তার সঙ্গে পরিকল্পনা করা সহজ। গুঞ্জন রয়েছে যে, কাদের শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করছেন। তার অবস্থান গৌহাটিতে থাকার সিদ্ধান্তকে এক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত বলে মনে হতে পারে, কারণ শেখ হাসিনা বর্তমানে দিল্লির একটি সুরক্ষিত বাংলোতে অবস্থান করছেন। কাদেরের মেঘালয় ও আসাম অঞ্চলে থাকা, তার প্রভাবশালী রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তার সম্পর্কের মধ্যে অনেক সমীকরণ রয়েছে।

সিলেটের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

ওবায়দুল কাদের সিলেট শহরের ইসলামপুর এলাকায় ‘৫শ কোটি’র বাসা নামে পরিচিত একটি বিলাসবহুল বাড়িতে মাসখানেক অবস্থান করেছিলেন। এই বাড়িটি একটি প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে তার যোগাযোগের কেন্দ্রস্থল ছিল। সেখান থেকেই তিনি সিলেট সীমান্ত পার হওয়ার পরিকল্পনা করেন। এছাড়া, শিলং ও গৌহাটি অঞ্চলে সিলেটের বিভিন্ন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতি, এই অঞ্চলের রাজনৈতিক গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন খান, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ শতাধিক নেতাকর্মী বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন।

ওবায়দুল কাদেরের পালানোর ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় পরিবর্তন এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। তার পালানোর পথে সিলেট এবং গৌহাটির মতো অঞ্চলগুলির নির্বাচনী এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে, কারণ এখানকার অনেক পলাতক নেতা তার আশ্রয় নিয়েছেন। কাদেরের সেলফ-অ্যাডভোকেটেড পালানোর পেছনে একাধিক লক্ষ্য থাকতে পারে, যার মধ্যে শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও থাকতে পারে। তার এই পলায়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্রে নতুন করে যে অস্থিরতা ও সংকট সৃষ্টি করেছে, তা সামনে আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে, বিশেষত যদি তিনি দেশে ফিরে এসে সরকারের বিরুদ্ধে আরও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

এই পরিস্থিতি কেবল শীর্ষ নেতাদের পালানোর একটি ঘটনা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের গভীরতাকে আরও প্রকাশ করে, যেখানে রাজনীতি এবং ক্ষমতার লড়াই অত্যন্ত তীব্র হয়ে উঠছে।

Leave a Reply