প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আশাহত হয়েছি: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গত সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “অনেকে আশান্বিত হয়েছিলেন, কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা আশাহত হয়েছি। আমরা আশা করেছিলাম যে, প্রধান উপদেষ্টা তার সমস্ত প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করে নির্বাচনের একটি রূপরেখা দেবেন।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে ফখরুলের মন্তব্য
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি বারবার নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে কারণ, তাদের বিশ্বাস—নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের সমস্যা সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় আসুক বা না আসুক, সেটা বড় কথা নয়, তবে নির্বাচনের মাধ্যমে যারা দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, তারা অবশেষে পিছিয়ে যাবে।”
সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান
ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন, “সংস্কার আমরা চাই না শুধু, আমরা সংস্কার শুরু করেছি।” তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা সংস্কার করতে চাই, তবে সেটা এমনভাবে হওয়া উচিত, যেন তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। আমরা এখনও আপনাদের কোনো বাধা সৃষ্টি করিনি, বরং সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি।”
সরকারের প্রতি অভিযোগ
সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে ফখরুল বলেন, “সচিবালয়ে স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছেন। আপনি কাদের দিয়ে সংস্কার করবেন? এরা তো সংস্কার করতে দেবে না আপনাকে।” তিনি দেশের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “দেশের শাসনব্যবস্থা এমন হতে হবে যেন দেশের মানুষ স্বস্তি পায়, শান্তি পায়। দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতির পরিস্থিতি চলছে, তাতে জনগণের শান্তি পাওয়ার কোনো কারণ নেই।”
দ্রুত সংস্কারের দাবি
ফখরুল আরও বলেন, “এই সরকার অনেক কমিশন গঠন করেছে সংস্কারের জন্য, কিন্তু জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য সেগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। আমরা চাই, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর করা হোক, যাতে দেশের আলোচনাগুলি আলোর দিকে এগিয়ে যায়।”
নির্বাচন বিলম্বের বিরুদ্ধে সতর্কতা
ফখরুল নির্বাচন দেরিতে হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “নির্বাচন যত দেরি হবে, তত বিতর্ক সৃষ্টি হবে। দেরি হলে বাংলাদেশের শত্রুরা আরও সংগঠিত হবে।” তিনি বলেন, বিএনপি আগেই ৩১ দফা সংস্কারের কথা বলেছে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও পূর্বে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সময়মতো সংস্কারের আহ্বান
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা সংস্কার চাই, তবে সেই সময়টা যেন যৌক্তিক হয় এবং কোনোভাবেই মনে না হয় যে তারা ক্ষমতায় থেকে যাবে।” তিনি আরও বলেন, বিএনপি যে সংস্কারের পক্ষে, তার প্রমাণ তারা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে এবং সময়মতো তা বাস্তবায়িত করতে চায়।
সভায় উপস্থিত বক্তারা
এদিনের সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সভাপতিত্ব করেন। অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
ফখরুলের এই বক্তব্যে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে বিএনপির নির্বাচনী সংস্কার এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সরকারের কার্যক্রম নিয়ে তীব্র সমালোচনা। তারা আশা করছে, সরকার দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারের জন্য একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া গ্রহণ করবে।