গণমাধ্যম সংস্কারে ১১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন
গণমাধ্যম সংস্কারে ১১ সদস্যের কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে। সরকারের নতুন এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তি ও বস্তুনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করা। কমিশনটি যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করবে এবং তার সদস্যদের মধ্যে যাঁরা রয়েছেন, তা বিশ্লেষণ করলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে আসে।
কমিশনের প্রধান হিসেবে সাংবাদিক কামাল আহমেদকে নিযুক্ত করা হয়েছে, যিনি গণমাধ্যমের কার্যক্রম এবং তার উন্নতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। কমিশনের সদস্যদের মধ্যে বিশেষভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, শামসুল হক জাহিদ (দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস), আখতার হোসেন খান (নোয়াব), সৈয়দ আবদাল আহমেদ (জাতীয় প্রেস ক্লাব), ফাহিম আহমেদ (যমুনা টেলিভিশন) এবং অন্যান্য গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা রয়েছেন। এই সকল সদস্য মূলত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গণমাধ্যমের সংস্কার প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবেন। কমিশনের সদস্যরা একাধারে গণমাধ্যম কর্মী, সম্পাদক, সাংবাদিক ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রাখেন, যা কমিশনের কার্যক্রমের যথার্থতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করবে।
প্রজ্ঞাপনে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কমিশনের উদ্দেশ্য হচ্ছে গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করে তোলা। এর জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির মাধ্যমে একটি সুসংহত ও কার্যকর গণমাধ্যম কাঠামো গড়ে তোলা হবে। কমিশনের কাজের মধ্যে থাকবে—
- গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বৃদ্ধি: গণমাধ্যমের উপর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক প্রভাব কমানো এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করা।
- গণমাধ্যমের শক্তি বৃদ্ধি: গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তি এবং টেকসই উন্নতি নিশ্চিত করতে কাঠামোগত সংস্কার করা।
- বস্তুনিষ্ঠতা: গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা এবং নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ।
কমিশনটির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি গণমাধ্যম সংস্কারে সুপারিশ প্রদান করবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল মতামত বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবনা দেবে।
কমিশনটির কাজকে সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর বা সংস্থা কমিশনের কাজের জন্য তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করবে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। এছাড়া, কমিশন প্রয়োজনে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে, যা তার কার্যক্রমের গতি বাড়াতে সহায়ক হবে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কমিশনের প্রধান এবং সদস্যরা সরকারের নির্ধারিত পদমর্যাদা, বেতন, সম্মানি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে, যদি কমিশনের কোনো সদস্য অবৈতনিকভাবে কাজ করতে চান বা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ না করতে চান, তাহলে তাদের এই সিদ্ধান্তটি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন করবেন।
এই কমিশনের গঠন সরকারের একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ, যা গণমাধ্যমের ভবিষ্যত রূপকারে সহায়ক হতে পারে। তবে, কমিশনের কার্যক্রম কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করবে কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়, এবং তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সহায়তা কেমন হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত বর্তমান সময়ে যখন তথ্যের সঠিকতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এছাড়া, গণমাধ্যমের শক্তিশালী কাঠামো নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে শুধু নিয়মকানুন নয়, প্রকৃত সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
তবে, এই সংস্কার উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করবে যে, কমিশনটি কোন বিশেষ গোষ্ঠীর বা সরকারের অঙ্গীকারের দিকে ধাবিত না হয়ে, সত্যিকার অর্থে গণমাধ্যমের কল্যাণে কাজ করতে সক্ষম হয় কি না। এই প্রক্রিয়া যেন জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।