December 24, 2024
ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে চান জিনপিং

ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে চান জিনপিং

নভে ১৭, ২০২৪

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সম্পর্ক এবং তার প্রশাসনের গঠিত নতুন দলের সদস্যদের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও বৈশ্বিক সম্পর্কের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে। এই পরিস্থিতি বর্তমানে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন পরবর্তী সংকট এবং বিশ্বরাজনৈতিক টানাপোড়েনের এক অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, বিশেষত মার্কিন-চীন সম্পর্কের প্রসঙ্গে। এখানে প্রধানত কয়েকটি বিষয়কে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে:

১. চীনের সাথে সম্পর্ক এবং ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন:

  • চীনের প্রতিশ্রুতি ও উত্তেজনা: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা দুই দেশের জন্য সহযোগিতার সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত করে। তবে, তাদের পূর্ববর্তী সম্পর্কের ইতিহাস দেখলে, বাণিজ্য, তাইওয়ান, এবং দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে উত্তেজনা ছিল। শি জিনপিং এবং ট্রাম্পের বৈঠকেও উত্তেজনা কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এত সহজে স্থিতিশীল হবে, তা আশা করা কঠিন।
  • ট্রাম্পের প্রশাসনে চীনের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি: ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে চীনকে ‘কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং মহামারি COVID-19 এর সময় চীনের প্রতি আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছিলেন, যেমন ‘চীনা ভাইরাস’ তকমা দেওয়া। তার দ্বিতীয় মেয়াদে, যদি তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তবে চীনের বিরুদ্ধে এই কঠোর নীতি আরো তীব্র হতে পারে, বিশেষত তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য যে কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের মধ্যে চীনের প্রতি কঠোর অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিরা রয়েছেন।

২. নতুন প্রশাসনে নিয়োগ এবং বিশ্বরাজনীতি:

  • মাইকেল ওয়াল্টজ এবং মার্কো রুবিও: ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনে মাইকেল ওয়াল্টজকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের পরিকল্পনা করেছেন, যিনি চীনের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করেছেন এবং চীনের বিরুদ্ধে সংঘাত প্রস্তুতির বিষয়ে একাধিকবার মন্তব্য করেছেন। এছাড়া, মার্কো রুবিও, যিনি চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করেছেন, তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। এই নিয়োগগুলো চীনের প্রতি কঠোরতার পাশাপাশি, ট্রাম্প প্রশাসনের বৈশ্বিক নীতিতে পুনরুদ্ধার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
  • গণতন্ত্র ও মানবাধিকার: চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব গ্রহণ করে, ট্রাম্প সরকারের নতুন নেতৃত্ব বিশ্বরাজনৈতিক গণতান্ত্রিক আদর্শের পক্ষে কাজ করতে পারে, বিশেষত যখন চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং হংকং বা ইউইঘুরদের প্রতি আচরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ রয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে আরও কঠোর অবস্থান এবং বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

৩. চীনের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ ও অর্থনৈতিক নীতি:

  • কোভিড-১৯ ক্ষতিপূরণ দাবি: ট্রাম্পের একটি পুরনো দাবি ছিল, চীনকে করোনাভাইরাস মহামারির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, এবং তিনি এর জন্য একটি প্রচারণা চালিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে, ট্রাম্প চীনকে আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে চাপে রাখার চেষ্টা করতে পারেন। তিনি বলেন, “আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশগুলোর জন্য এখন সময় এসেছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ ও জবাবদিহিতা দাবি করার”।
  • শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা: ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর ১০০% শুল্ক আরোপের কথা বলেন, যা চীনকে তাদের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি বন্ধ করতে বাধ্য করতে পারে এবং একদিকে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরও বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আবার চরমে পৌঁছতে পারে, বিশেষত ট্রাম্পের কঠোর বাণিজ্য নীতির পরিপ্রেক্ষিতে।

৪. বাইডেন প্রশাসনের বিপরীতে ট্রাম্পের অবস্থান:

  • বাইডেন এবং শি জিনপিংয়ের সম্পর্ক: বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের প্রথম চার বছরের শাসনে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সম্পর্ক বেশ উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। বাইডেন প্রশাসন, যদিও চীনকে প্রতিযোগী হিসেবে মানতে রাজি, তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের একটি মৌলিক পরিবর্তন এবং বিশ্ব বাণিজ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন সহ অন্যান্য ইস্যুগুলোর প্রতি অধিক মনোযোগ দেয়।
  • ট্রাম্পের মতাদর্শের পরিবর্তন: ট্রাম্পের প্রশাসনে চীনকে বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং রাজনৈতিক শত্রু হিসেবে দেখার প্রবণতা ছিল, যা বাইডেন প্রশাসনের তুলনায় অনেক বেশি সংকীর্ণ ও সংঘাতপূর্ণ ছিল। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যদি তিনি কার্যকরী হন, তবে এটি বিশ্বরাজনীতিতে চীনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নীতির সূত্রপাত করতে পারে।

৫. চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যৎ:

  • বাণিজ্য যুদ্ধ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা: যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং প্রতিযোগিতা আগামী দিনে তীব্র হতে পারে, বিশেষত ট্রাম্পের প্রশাসনে। তবে, বাইডেন প্রশাসন চীনের সঙ্গে নতুন সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে।
  • বিশ্ব নিরাপত্তা এবং সামরিক উত্তেজনা: চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের সবচেয়ে উত্তপ্ত ইস্যু তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগর। ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত চীনের সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে, যার ফলে এই অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনে চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব এবং ট্রাম্পের পক্ষে ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা বিশ্বের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হতে পারে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতিশ্রুতি এবং ট্রাম্পের প্রশাসন বিশেষত বাণিজ্য যুদ্ধ, তাইওয়ান সংকট, এবং কোভিড-১৯ ক্ষতিপূরণ ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিতে পারে। তবে, এসব পরিস্থিতি বৈশ্বিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে বিশ্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

Leave a Reply