র্যাব-পুলিশের ৫৩ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সাত নেতাকর্মী তাদের ওপর র্যাব ও পুলিশের নির্যাতন, গুম ও পঙ্গুত্ববরণের অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। এই অভিযোগের মাধ্যমে তারা যে ভয়াবহ শোষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন, তা প্রকাশ পেয়েছে। এই ধরনের অভিযোগের গুরুত্ব অনেক কারণেই অপরিসীম।
ঘটনার পটভূমি:
এই অভিযোগগুলো মূলত ২০০০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ঘটিত নির্যাতন, গুম ও অত্যাচারের উপর ভিত্তি করে। অভিযোগকারীরা দাবি করছেন যে, তাদেরকে বিভিন্ন সময় র্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করে অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। এর ফলে তারা শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়েছেন, কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়েছেন এবং একজন এখনও নিখোঁজ। এই অভিযোগটি সঠিকভাবে তদন্ত না করা হলে, এটি দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং একবিংশ শতাব্দীর রাজনৈতিক দমন-পীড়নের ভয়াবহ উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে।
অভিযুক্তদের ভূমিকা:
অভিযোগপত্রে র্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তাসহ ৫৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে এই অমানবিক নির্যাতন এবং গুমের অভিযোগ করা হয়েছে। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে যেসব ঘটনাগুলি উল্লেখযোগ্য:
- শারীরিক নির্যাতন: অভিযুক্তরা বলছেন, নির্যাতনের ফলে তাদের পা হারানো, দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া বা পুরো শরীর পঙ্গু হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর শারীরিক ক্ষতি হয়েছে।
- গুম: তাদের মধ্যে একজন এখনও নিখোঁজ আছেন, যিনি কয়েক বছর আগে গুম হয়ে যান। তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে, তাকে আটক করা হয়েছিল এবং এরপর আর তার কোনো খোঁজ মেলেনি।
- মানবাধিকার লঙ্ঘন: এসব ঘটনাগুলো শুধু নির্যাতন নয়, এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনেরও স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ভুক্তভোগীদের অবস্থা:
অভিযোগকারীদের মধ্যে বিভিন্ন এলাকার লোক রয়েছে, যাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের মধ্যে:
- মো. জনি ইসলাম: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের কর্মী, যিনি নির্যাতনে পা হারিয়েছেন।
- মো. আব্দুল করিম: চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ছাত্রশিবিরের কর্মী।
- আলমগীর হোসেন: বগুড়ার শেরেপুরের সাবেক কর্মী, যিনি পঙ্গু হয়ে গেছেন।
- দেলোয়ার হোসেন মিশু: নোয়াখালীর ছাত্রশিবিরের কর্মী, যিনি নির্যাতনে চোখ হারিয়েছেন।
- সাইফুল ইসলাম তারেক: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ছাত্রশিবিরের কর্মী, যিনি পঙ্গু হয়ে গেছেন।
- নুরুল আমিন: গুলশান ভাটারা থানার ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি।
- মো. কামারুজ্জামান: ঝিনাইদহের রতনহাট উপজেলার সাবেক সভাপতি।
এই সমস্ত মানুষ তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ—স্বাস্থ্য ও শারীরিক অঙ্গহানি—হারিয়েছেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা দমন-পীড়নের শিকার হয়ে। তাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তাদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন।
আইনগত প্রেক্ষিত:
এই অভিযোগগুলো যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে, তখন এটি কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ নয়, আন্তর্জাতিক আদালতেও আলোচিত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। যদি এই অভিযোগগুলি প্রমাণিত হয়, তাহলে র্যাব ও পুলিশ বাহিনীর নির্দিষ্ট সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন এবং আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।
এখানে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে এই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা। এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও উচিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করা, যাতে ভবিষ্যতে এমন ধরনের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
উল্লিখিত প্রসঙ্গ:
এই অভিযোগের ফলে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা, নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অভিযোগকারীরা সরকারের নিন্দা করেছেন, তবে সেই সাথে তাদের এই দুর্দশার জন্য জবাবদিহি দাবি করেছেন। এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট এক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অপব্যবহার ও নির্যাতন সম্পর্কে বড় একটি বার্তা দিচ্ছে।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ও রাষ্ট্রের দায়িত্ববোধ অনেক বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আশা করা যায়, এই তদন্তের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়ের সুবিচার পাওয়ার পথ সুগম হবে।