ঢাকায় প্রবাসী চিকিৎসক খুন ডাকাতি শেষে শিশু অপহরণ
রাজধানী ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় তিনটি চাঞ্চল্যকর অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, যা আইনশৃঙ্খলার অবনতির ইঙ্গিত দেয়। এই ঘটনা গুলোতে খুন, ডাকাতি এবং একটি শিশুর অপহরণ অন্তর্ভুক্ত, এবং তা সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। চলুন, প্রতিটি ঘটনার বিশ্লেষণ করি:
গত বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিম ধানমন্ডি এলাকায় যুক্তরাজ্যপ্রবাসী চিকিৎসক এ কে এম আব্দুর রশিদ (৮২) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতের পরিবার ও পুলিশ ধারণা করছে, দুর্বৃত্তরা চুরি করার সময় বাধা পেয়ে তাকে হত্যা করেছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় তিন যুবক ভবনে ঢুকতে এবং বের হতে, তবে তাদের মুখ পরিষ্কারভাবে চেনা যায়নি।
নিহত আব্দুর রশিদ ও তাঁর স্ত্রী সুফিয়া রশিদ যুক্তরাজ্যের নাগরিক হলেও কিছু সময়ের জন্য দেশে এসে থাকতেন। তারা প্রায়ই তাদের বাসায় প্রবেশ করতে থাকেন, কিন্তু এবার এক অন্ধকার রাতে দুর্বৃত্তরা তাদের বাসায় ঢুকে চুরি করার চেষ্টা করে। রশিদ বাধা দিলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা হয়, ফলে তিনি মারা যান।
এ ঘটনার ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা একদিকে যেমন আতঙ্কিত, অন্যদিকে পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। পুলিশের মতে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও কিছু গোপন কারণ থাকতে পারে, যেমন সম্পর্কের জটিলতা কিংবা চুরির সময় সংঘটিত অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি।
ঢাকার আজিমপুর এলাকায় একটি বাসায় ডাকাতি ও শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকালে, ডাকাতরা টাকা এবং স্বর্ণালংকার লুট করে গৃহকর্তার আট মাসের শিশু জাইফাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পুলিশ ধারণা করছে, গৃহকর্ত্রী ফারজানা আক্তারের বাসায় সাবলেট থাকা এক নারীই মূল হোতা, যে অন্যদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই অপরাধ ঘটিয়েছে।
এই ঘটনার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং সিসিটিভি ফুটেজেও কিছু আলামত পাওয়া গেছে, যা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এখনও দায়ের হয়নি। একদিকে, ডাকাতি এবং অন্যদিকে শিশুকে অপহরণ করাটা সবার কাছে একেবারে অস্বাভাবিক এবং ভয়াবহ ঘটনা।
এ ঘটনায় বাসার নিরাপত্তাকর্মীসহ স্থানীয়রা জানিয়েছে, অতি সকালে যখন ডাকাতির ঘটনা ঘটে, তখন গৃহকর্ত্রীও কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার সন্তানকে অপহরণ করা হয়। ডাকাতরা শিশুটির সঙ্গে অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্রও নিয়ে চলে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুই পুরুষ এবং এক নারী ওই বাসায় প্রবেশ করে এবং অপহরণের পর বের হয়ে যায়।
হাজারীবাগ এলাকায় সাইকেল চুরিতে বাধা দেওয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্য শাহাদাত আকবর হোসেন শান্ত (১৭) কে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এটি আবারও প্রমাণ করে যে, ঢাকার কিছু এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ বাড়ছে এবং তারা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অপরাধে আক্রান্ত হয়ে শান্ত জীবন হারান।
এ ধরনের অপরাধের দ্রুত বৃদ্ধি সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্ক হতে বাধ্য করছে। কিশোর গ্যাংয়ের প্রতি সরকারের বিশেষ মনোযোগের প্রয়োজন, কেননা তাদের অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।
এই তিনটি ঘটনা নিয়ে যে আলোচনার ঝড় উঠেছে, তা আসলে ঢাকার ক্রমবর্ধমান অপরাধের প্রবণতার একটি চিত্র তুলে ধরছে। ঢাকা শহরে গত দুই মাসে অন্তত ৬৮ জন খুন হয়েছেন, যা উদ্বেগজনক। একের পর এক এই ধরনের ঘটনা সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
সারা শহরে অপরাধের মাত্রা বাড়ছে, বিশেষ করে গ্যাং ও সংঘবদ্ধ অপরাধীদের কারণে।
বিশেষত, শিশু অপহরণ এবং নারীদের ওপর হামলা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একাধিক ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে অপরাধী চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হলেও, অনেক সময় এটি অন্ধকারে ঢেকে থাকে। এসব অপরাধীরা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজ করে।
অপরাধের এই প্রবণতা রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে কিশোর গ্যাং এবং নারী ও শিশুদের ওপর আক্রমণ ঠেকাতে আরো কঠোর আইন প্রয়োগের প্রয়োজন। সিসিটিভি প্রযুক্তি এবং পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপরাধবোধ কমানোর জন্য সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
ঢাকায় অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি এবং মানুষের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগের বিষয়টি দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের কার্যক্রম আরো দ্রুত ও কার্যকরী হতে হবে। পাশাপাশি, সামাজিক সচেতনতা এবং পরিবারের দায়িত্বও অপরিহার্য।