December 23, 2024
সিরিয়াল কিলার যখন ভূতের চেয়ে ভয়ংকর

সিরিয়াল কিলার যখন ভূতের চেয়ে ভয়ংকর

নভে ১৬, ২০২৪

‘হাঁসের সালুন’ সিরিজটি সত্যিই একটি মনোমুগ্ধকর কাহিনী, যা সাসপেন্স এবং ভৌতিক উপাদানের সঙ্গে হাস্যরসের মিশ্রণ তৈরি করেছে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র, মোজাফফর গায়েন বা মজু মিয়া, যিনি এক ভয়ংকর খুনি, তার চরিত্রকে মোশাররফ করিম এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে দর্শক তার সঙ্গে একে একে আতঙ্কিত ও অবাক হয়। এ ধরনের চরিত্রে তিনি একেবারে অনবদ্য, কারণ তার অভিনয়ে এমন এক রহস্যময় আভা রয়েছে, যা কখনোই অস্বাভাবিক মনে হয় না, অথচ পরবর্তীতে তার পরিণতি ভয়ংকর।

গল্পের বিষয়বস্তু সত্যিই বেশ চমকপ্রদ—একদিকে মজু মিয়ার ভয়ংকর খুনী মনোভাব, অন্যদিকে তার দুটি অদ্ভুত শখ, যার মধ্যে ঘুঘু ধরার ফাঁদ এক বিশেষ গুরুত্ব পায়। এই খুনের পরে তার অন্য শখের প্রতি আকর্ষণ এবং সেই আকর্ষণের মধ্য দিয়ে ঘটনার অন্যরকম মোড়, দর্শককে একধরণের উন্মাদনা ও শঙ্কা তৈরী করে। মজু মিয়ার চরিত্রটি একজন পাগলপারা মানুষকে উপস্থাপন করে, কিন্তু তার মধ্যে যে ভয়ঙ্কর খুনির পেছনে এক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে, তা হালকাভাবে তুলে ধরে গল্পটি।

পাশাপাশি, সিরিজের ‘হাঁসের সালুন’ পর্বের যে ভৌতিক উপাদান রয়েছে, তা একটি নির্দিষ্ট সময়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে, তবে গল্পের মধ্যে হাস্যরসের মিশ্রণটা বেশ মনোরঞ্জক। বিশেষ করে, নিদ্রা নেহা ও মোশাররফ করিমের কথোপকথন, যেখানে হাস্যরসের মধ্যে একটা গভীরতা থাকে, সেই দৃশ্যটি গল্পের টানটান পরিবেশে এক ধরণের প্রশান্তি এনে দেয়। এই সিগনেচার দৃশ্যটি শুধু চমকপ্রদ নয়, বরং গল্পের এক নতুন স্তরে নিয়ে যায়। এছাড়া, গ্রামীণ পটভূমি, রাজনৈতিক মিটিং বা নির্বাচনের সময়ে এরকম ছোটখাটো দৃশ্যগুলোও গল্পের জমিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

‘হাঁসের সালুন’-এর মাধ্যমে কাজী আসাদ নির্মাণে প্রমাণ করেছেন যে তিনি ঘরানার মধ্যে ভিন্নতা আনতে পারদর্শী। প্রথম পর্বে তার মুনশিয়ানা, বিশেষ করে ‘বোয়াল মাছের ঝোল’-এ, তা একদম ভালোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল, যদিও ‘খাসির পায়া’ পর্বটি কিছুটা দুর্বল ছিল। তবে শেষ পর্বের মাধ্যমে তিনি যেন সব কিছু ঠিকঠাক পুষিয়ে দিয়েছেন। নির্মাতা গল্পের মধ্যে মজু মিয়ার সাইকোলজি, তার জীবনযাত্রা এবং অবলীলায় খুনের দৃশ্যগুলো মেশাতে সমর্থ হয়েছেন।

তবে, যদি ‘ভূত’ বা ভৌতিক উপাদানটির দিকে তাকানো যায়, তবে সেখানে কিছুটা দ্বিধা দেখা যায়। ভূতের ভয় বা সেই শঙ্কা খুব বেশি অনুভূত হয় না, বরং গল্পের অতিরিক্ত মানবিক এবং সাইকোলজিক্যাল উপাদানই বেশি সামনে আসে। সম্ভবত এটি নির্দিষ্ট টোনের মধ্যে এসে ভূতের আতঙ্ককে কিছুটা পেছনে ফেলে দেয়। তবে তাতে গল্পের আকর্ষণ কমে যায় না।

সব মিলিয়ে, ‘হাঁসের সালুন’ অত্যন্ত কার্যকরী একটি গল্প, যা গ্রামীণ জীবন, সাসপেন্স, রহস্য এবং কমেডির সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে। দর্শককে ভীতি ও হাস্যরসের মধ্যে যে সঠিক ভারসাম্য রাখা হয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কাজী আসাদ এবং তার দল অসাধারণ কাজ করেছেন এই পর্বটি নির্মাণে, যা শেষ পর্যন্ত দর্শককে এক শক্তিশালী চমক উপহার দেয়।

এটি নিঃসন্দেহে ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’-এর অন্যতম সেরা পর্ব, যা হরর-থ্রিলার ঘরানায় এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করেছে।

Leave a Reply