December 23, 2024
ইসরায়েলি আগ্রাসনে লেবাননে ৮০০ কোটি ডলারের ক্ষতি

ইসরায়েলি আগ্রাসনে লেবাননে ৮০০ কোটি ডলারের ক্ষতি

নভে ১৫, ২০২৪

গাজায় নির্বিচারে হামলার প্রতিবাদে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, যা ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ায় বিমান হামলা এবং স্থল অভিযানকে উসকে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি, বিশেষ করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), লেবাননের অর্থনৈতিক এবং মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই সংঘাতের ফলে লেবানন ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং দেশটির অর্থনীতি বহু বছর পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

১. লেবাননে সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব:

ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর সংঘাতে লেবানন ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত এই সংঘাতের ফলে লেবাননের মোট অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৫১০ কোটি ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ভৌত অবকাঠামো এবং বাণিজ্য, পর্যটনকৃষিক্ষেত্র খাতে।

  • বাড়িঘরের ক্ষতি: লেবাননে প্রায় ৯৯,০০০ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২৮০ কোটি ডলার
  • বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস: ২০২৪ সালের জন্য লেবাননের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৬ শতাংশ কমবে। ২০১৯ সাল থেকেই লেবাননের অর্থনীতি গভীর সংকটে রয়েছে, যার ফলে বহু মানুষ দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

২. ইসরায়েলি হামলা এবং লেবাননের বিপর্যয়:

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ইসরায়েল লেবাননে বিমান হামলা এবং স্থল হামলা তীব্রতর করে। বৈরুতের দক্ষিণের উপশহর এবং দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন শহর যেমন টাইর, নাবাতিয়েহ, সাইদা, বিন্ত জবাইল, মারজাইউন এলাকায় ব্যাপক হামলা চালানো হয়। এসব এলাকায় অবকাঠামো ক্ষতির প্রায় ৮১ শতাংশ হয়েছে।

  • বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস: ২০২৪ সালের শেষের দিকে লেবাননের অর্থনীতি আরও বিপর্যস্ত হতে পারে, এবং দেশটির জাতীয় সম্পদ ৯ শতাংশ সংকুচিত হবে, যা ২০০৬ সালের যুদ্ধের থেকেও বড় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

৩. গাজায় মানবিক পরিস্থিতি:

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে যে, গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মোট ৪৩,৭৩৬ জন নিহত হয়েছেন, এবং লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় লেবাননে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২১ জন নিহত হয়েছেন, ফলে মৃতের সংখ্যা ৩,৩৮৬-এ পৌঁছেছে।

  • ইসরায়েলি বাহিনীর ক্ষতি: লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষে ইসরায়েলের আরও সেনা নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৫ জন দক্ষিণ লেবাননের গভীরে অভিযানকালে মারা যান।

৪. ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ক্ষতি:

ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ফলে তাদের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে যুদ্ধের ফলে ইসরায়েলের সরাসরি খরচ ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৪ সালের জন্য ইসরায়েলের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা তাদের অর্থনৈতিক সঙ্কটের একটি বড় লক্ষণ।

৫. মোট ক্ষতির পূর্বাভাস এবং ভবিষ্যৎ প্রভাব:

ইউএনডিপি’র পূর্বাভাস অনুসারে, এই যুদ্ধের প্রভাব লেবাননের উপর দীর্ঘমেয়াদি হবে। লেবাননের জিডিপি ২০২৫ সালে ২.২৮ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ২.৪৩ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। এটি লেবাননের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ দেশটি ইতিমধ্যেই গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে।

  • বিশ্বব্যাংক এবং ইউএনডিপি এই সংঘাতের ফলে লেবাননের অর্থনীতির উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছে, যা দেশটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তুলবে।

৬. গাজার এবং লেবাননের মানুষজনের দুর্দশা:

এই সংঘাতের ফলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষতির পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের বাড়িঘর হারিয়েছেন। হুমকির মুখে থাকা মানবিক পরিস্থিতি আরো তীব্র হয়ে উঠেছে, যেখানে আশ্রয়, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার অভাব সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধের সময় পারস্পরিক আক্রমণ এবং প্রতিক্রিয়া মানবিক বিপর্যয়ের আকার ধারণ করেছে, যা শুধু রাজনৈতিক বা সামরিক ক্ষেত্রে নয়, মানুষের জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলেছে।

৭. অর্থনৈতিক ভবিষ্যত এবং পদক্ষেপের প্রয়োজন:

লেবাননের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন। চলমান সংঘাতের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন সম্ভব হয় এবং মানবিক সহায়তা প্রবাহ অব্যাহত থাকে।

লেবানন ও ইসরায়েলের সংঘাত শুধু মানবিক এবং রাজনৈতিক সংকটই সৃষ্টি করেনি, তা দেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বব্যাংক ও ইউএনডিপি’র প্রতিবেদন থেকে যা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা হলো, এই সংঘাত লেবাননের জন্য একটি গভীর অর্থনৈতিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। এর সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা এবং দেশীয় স্তরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Reply