প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হবেন না, এটা নিশ্চিত করতে চাই: তারেক রহমান
তারেক রহমানের বক্তব্য ও সেমিনারের আলোচনা থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত এবং রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ উঠে এসেছে। তার বক্তব্য এবং সেমিনারে অন্য বক্তাদের মতামতের আলোকে বিশ্লেষণ করলে কিছু মূল পয়েন্ট সামনে আসে:
তারেক রহমান বলেন, “আগামীর বাংলাদেশে আর কোনো ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না”—এটি একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি, যা প্রমাণ করে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনায় শাসকশ্রেণির অপব্যবহার থেকে মুক্ত সমাজ গঠনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তার মতে, ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা আইনের ঊর্ধ্বে নয়, প্রত্যেককে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এটি একটি সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চাওয়া, যেখানে রাজনীতির আধুনিকীকরণ এবং গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভগুলি পুনরুদ্ধার করা হবে।
তারেক রহমানের বক্তব্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাধীনভাবে নিজেদের ভাবনা প্রকাশের অধিকার রক্ষা। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ইউটিউব, ফেসবুকসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নাগরিকদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে এবং এর জন্য কোনো ধরনের হুমকি বা হেনস্তা হবে না। এটি বর্তমান সরকারের অধীনে চাপ বা সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে একটি প্রতিক্রিয়া।
এছাড়া, তিনি গণমাধ্যমের কাছে নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সঠিক তথ্য পরিবেশন নিশ্চিত করতে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সুশাসন বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবটি একটি ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যেখানে রাষ্ট্র কাঠামো, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিকগুলি সমন্বিতভাবে সংস্কার করার কথা বলা হয়েছে। তারেক রহমান বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে কেবল সংবিধানে কিছু বাক্য পরিবর্তন করা হবে না, বরং মানুষের জীবনযাত্রায় সত্যিকার পরিবর্তন আসবে। এটি সেই দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অন্তর্নিহিত মানবিক কাঠামোর পরিবর্তন, যেখানে জনগণের সুযোগ সুবিধা, তাদের মৌলিক অধিকার ও সমান সুযোগের প্রতি গুরুতর মনোযোগ থাকবে।
তারেক রহমান আওয়ামী লীগ সরকারকে তীব্র সমালোচনা করেছেন, বিশেষ করে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে দলীয়ভাবে অপরাধীদের শাস্তি না দেওয়ার বিষয়ে। তিনি বলেছিলেন, “দেড় হাজার গণতন্ত্রকামী মানুষকে হত্যা করার পরও আওয়ামী লীগের কোনো নেতার অনুশোচনা নেই”—এটি সরকারের অধীনে সুশাসনের অভাব এবং রাষ্ট্রীয় হিংস্রতার বিরুদ্ধে একটি প্রখর সমালোচনা। বিএনপি দাবি করছে, তার দলের কর্মীরা অপরাধে জড়ালে তাত্ক্ষণিক সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যদিও তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
তারেক রহমানের বক্তব্যে ফ্যাসিবাদের পতন পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন যে, ক্ষমতার পালাবদলে এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা উচিত, যা জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটাতে পারে। এটি ইঙ্গিত করে যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে একদলীয় শাসন বা পরিবারতন্ত্রের প্রভাব মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জনগণের দাবি-দাওয়া অনুযায়ী একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন করতে চায়।
বিএনপি নিজেকে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবক হিসেবে তুলে ধরছে এবং এই সংস্কারের প্রক্রিয়া সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে জনসমর্থন ও রাজনৈতিক ঐক্য অপরিহার্য বলে মনে করছে। সেমিনারে জামায়াতে ইসলামী, নাগরিক ঐক্য, গণফোরামসহ বিভিন্ন দলের নেতারা এসব সংস্কারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তবে, কিছু নেতার মন্তব্য অনুসারে, বিএনপি যদি এই সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়, তবে জনগণের কাছে তাদের বিরুদ্ধে বরখেলাপকারী হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে। এর মানে হল, যে কোনো সরকারী প্রতিশ্রুতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারলে রাজনৈতিক ক্ষত হতে পারে।
এই সেমিনারে তারেক রহমান এবং অন্যান্য বক্তাদের আলোচনা পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। বিএনপি যেভাবে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা তাদের দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্যকে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে। তবে এই সংস্কারগুলি বাস্তবায়ন করার জন্য রাজনৈতিক সমর্থন, সুশাসন এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন হবে, যা শুধুমাত্র সময় ও ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের মাধ্যমেই সম্ভব হতে পারে।