December 23, 2024
খুনের চেয়েও গুম ভয়াবহ: আসিফ নজরুল

খুনের চেয়েও গুম ভয়াবহ: আসিফ নজরুল

নভে ১৫, ২০২৪

ড. আসিফ নজরুলের মন্তব্যগুলো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে, যা বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারী পদক্ষেপের প্রতি নজর দেয়। তাঁর বক্তব্যের কিছু মূল পয়েন্ট এবং তাদের বিশ্লেষণ নিম্নরূপ:

আসিফ নজরুলের প্রথম মন্তব্যটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ফ্যাসিবাদের শেকড় দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে থাকার কথা বলার মাধ্যমে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতি বা শাসনব্যবস্থা সহজে পরিবর্তন বা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। ১৫ বছর ধরে যে শাসনব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে, তা এর আগে বিভিন্ন প্রকার কৌশল ও শাসনিক প্রভাবের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়েছে। এই শাসনব্যবস্থা শুধু যে সরকারের ভিতরের ক্ষমতা কাঠামোকে শক্তিশালী করেছে, তা নয়, তার সঙ্গে রাজনৈতিক সমাজ, প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী এবং আদালত ব্যবস্থার মধ্যেও এক ধরনের সহযোগিতা বা প্রবণতা তৈরি করেছে, যা একে অত্যন্ত টেকসই ও শক্তিশালী করে তুলেছ

এখানে আসিফ নজরুল ‘গুম’ এবং ‘খুন’ এর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরছেন। খুনের ক্ষেত্রে একজনের মৃত্যু নিশ্চিত, কিন্তু গুমের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তা থাকে—গুম হয়ে যাওয়ার পর অনেক সময় কনফার্মেশন পাওয়া যায় না, ফলে শিকার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে উৎকণ্ঠা এবং অন্ধকারে থাকে। এটা মানসিকভাবে আরও ভয়াবহ এবং বিপর্যয়কর। আইনগতভাবে গুমের শিকার ব্যক্তির অবস্থা বেশ কঠিন, কারণ তাদের খুঁজে বের করা বা বিচার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের দিক থেকে এক ধরনের অক্ষমতা বা নির্লিপ্ততার অনুভূতি তৈরি হতে পারে, কিন্তু ড. আসিফ নজরুল মনে করেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের গুমের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন এবং শিকার পরিবারের পুনর্বাসনের উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার তাদের আন্তরিকতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, গুমের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করার বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, সরকার গুমের শিকার পরিবারগুলির জন্য পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। যদিও তা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, কিন্তু এই সিদ্ধান্ত একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে, সরকারের সক্ষমতা বা কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে সন্দেহও থাকতে পারে, কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক চাপের ফলে আইনগত পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে কার্যকরী হতে সময় নিতে পারে।

ফ্যাসিবাদের শেকড় ছড়িয়ে থাকা এবং ১৫ বছরের শাসনকে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়—এই বক্তব্যের মাধ্যমে ড. আসিফ নজরুল সরকারের দীর্ঘদিনের শাসনের শক্তির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ১৫ বছরের শাসন একটি দীর্ঘ সময়, যার মধ্যে প্রশাসনিক কাঠামো, বিচার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটা রাজনৈতিক প্রভাবিত হয়েছে। তাই, এই অবস্থাকে মোকাবিলা করতে অনেক সময়, নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা এবং সামাজিক সমর্থন প্রয়োজন।

ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্যে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ, বিশেষ করে গুমের ঘটনা এবং সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে একটি গভীর পর্যালোচনা করা হয়েছে। তার মতে, সরকারের দিক থেকে আন্তরিকতা থাকতে পারে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক কাঠামো এবং ফ্যাসিবাদী প্রভাবগুলো সহজে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এই পর্যবেক্ষণগুলি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সরকারের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা উত্থাপন করে।

Leave a Reply