এ মাসের মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে প্রবাহিত হচ্ছে, যেখানে সংগঠনটির কাঠামো ও কার্যক্রম নতুন করে গঠন এবং সমন্বয়ের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত ২২ অক্টোবর সমন্বয়ক কমিটি বিলুপ্ত করে চার সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়, যা বর্তমানে সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই পরিবর্তন এবং নতুন কমিটির অধীনে সংগঠনটি তার কর্মকৌশল ও সাংগঠনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী।
গত বুধবার রাজধানীর দিলু রোডে রূপায়ন টাওয়ারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় ১৫৮ জন সাবেক সমন্বয়ক অংশ নেন। সভায় তাদের মূল আলোচনা ছিল চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা, আসন্ন কর্মসূচির রূপরেখা নির্ধারণ এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় স্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর পরিকল্পনা। এর ফলে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে একটি নির্বাহী কমিটি গঠন এবং চলতি মাসের মধ্যে সাংগঠনিক টিম বা সেল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো সংগঠনের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল এবং কার্যকরী করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া টানা আন্দোলন একসময় গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ছাত্র এবং সাধারণ জনগণের সেই আন্দোলনেই ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ৮ জুলাই ৬৫ সদস্যের একটি সমন্বয়ক টিম গঠন করেন, যা পরে ৩ আগস্ট ১৫৮ সদস্যের করা হয়। তবে ২২ অক্টোবর থেকে নতুন কমিটির অধীনে সংগঠনটির কাজ শুরু হয়েছে, যেখানে হাসনাত আবদুল্লাহকে আহ্বায়ক, আরিফ সোহেলকে সদস্যসচিব, আবদুল হান্নান মাসউদকে মুখ্য সংগঠক এবং উমামা ফাতেমাকে মুখপাত্র করা হয়।
এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে তার সাংগঠনিক কাঠামো বিস্তৃত করতে শুরু করেছে, যার মাধ্যমে সংগঠনটি তৃণমূল স্তরে তার প্রভাব আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। অভ্যুত্থানের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটির সঙ্গে একটি দীর্ঘ সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নানা বিতর্ক এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সম্পর্কে মতামত বিনিময় করা হয়। সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, “সভায় সবাই তাদের মতামত জানিয়েছেন এবং সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিচালনা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে।”
এখানে প্রধান যে বিষয়টি সামনে আসছে তা হলো, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যেখানে নেতৃত্বের পরিবর্তন এবং সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ সংগঠনের অভ্যন্তরীণ শক্তি ও ঐক্যকে আরও দৃঢ় করার দিকে পরিচালিত করবে। ছাত্র আন্দোলন এখন শুধু কোটা সংস্কারের প্রশ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, এর পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক কাঠামো ও সিস্টেমে গভীর পরিবর্তন আনা, যা দেশের ভবিষ্যত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে ছাত্র আন্দোলন তার কর্মসূচি ও সংগঠনীয় কাঠামোকে নতুন করে সাজাচ্ছে, এবং তাদের প্রতি সাধারণ জনগণের সমর্থন ও আস্থাও বাড়ছে। তবে, কীভাবে এই নতুন কমিটি ও কাঠামো বাস্তবায়িত হবে এবং এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, তা নির্ভর করবে সংগঠনের নেতৃত্বের কার্যক্রমের সফলতার ওপর।