সংস্কারের পর নিবার্চন দেওয়া হবে: ড. ইউনূস
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে দেশটি গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক সংস্কারের পথে এগোচ্ছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ একটি অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে, এবং ৮ আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার মতে, সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারের মাধ্যমে এক নতুন যুগের সূচনা হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ সম্মেলনের ফাঁকে বার্তা সংস্থা এএফপির সঙ্গে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সংস্কার করা জরুরি,” এবং তারপরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা প্রস্তুত করা, এবং প্রস্তুতি শেষ হলেই নির্বাচন হবে।
ড. ইউনূসের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব সংস্কারের জন্য দেশের সকল স্তরের জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এটি শুধু সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং সংসদ এবং নির্বাচনী বিধির মৌলিক সংস্কারও প্রয়োজন। তার মতে, এই কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে, এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারে তাদের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত রাখতে চান, কারণ তাদের মূল লক্ষ্য হলো শীঘ্রই নির্বাচন আয়োজন করা।
এদিকে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন অত্যন্ত তীব্র হয়ে ওঠে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং তরুণদের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং বিক্ষোভের ফলে পরিস্থিতি তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে। আন্দোলন ধীরে ধীরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রূপ নেয়, এবং এর ফলে ৭০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এই বিক্ষোভের মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়, যা দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি করে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার শিগগিরই নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, কিন্তু এজন্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। সরকারের পতনের পর এই সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তবে তা সম্পূর্ণ হওয়ার পরই নির্বাচন দেওয়া হবে।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা একটি কাঠামোগত সমস্যা, যা শুধুমাত্র সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকার—সবার সহযোগিতার প্রয়োজন। ড. ইউনূসের সংস্কারের প্রস্তাবনার মধ্যে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা এবং ঐক্যের ডাক দেওয়া হচ্ছে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যত গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে রাজনৈতিক সংস্কার না হলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে না। রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলে, দেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হতে পারে।