‘ট্রাম্প ট্যারিফে’ ভুগবে চীন, লাভ ভিয়েতনামের, বাংলাদেশকে কী করতে হবে
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাঁর অর্থনৈতিক নীতিমালা বিশ্বব্যাপী নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তার বাণিজ্যনীতি বিশেষত ট্যারিফ বা শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য নতুন সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। ঢাকায় ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই নীতি বাংলাদেশের জন্য কিছু সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে, তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে।
আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর, ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করা পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে, এবং কিছু দেশের জন্য এটি ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। চীনকে লক্ষ্য করে ট্রাম্প যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছিলেন, তা এখন ‘ট্রাম্প ট্যারিফ’ নামে পরিচিত। এই নীতি ইতিমধ্যে চীনের বিরুদ্ধে শত শত কোটি ডলারের শুল্ক আরোপ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে লাভবান দেশগুলির মধ্যে অন্যতম ভিয়েতনাম। চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের ফলে, চীনা কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন ব্যবস্থা ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে, কারণ এই দেশের সস্তা শ্রম এবং মার্কিন বাজারে প্রবেশের সুবিধা রয়েছে। এইচএসবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে চীন থেকে ভিয়েতনামে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ, যা বিদেশি বিনিয়োগের একটি বড় অংশ।
এদিকে, বাংলাদেশের জন্যও কিছু সুযোগ তৈরি হতে পারে যদি চীনা কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন ব্যবস্থা ভিয়েতনাম বা অন্য দেশে স্থানান্তর করতে থাকে। তবে, ব্যবসায়ীদের মতে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বেশ কিছু বাধা রয়েছে, যেমন— আমলাতন্ত্র, দুর্নীতি, ব্যবসা করার খরচ এবং বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। এই সমস্যাগুলো সমাধান না হলে, বাংলাদেশের পক্ষে ট্রাম্পের শুল্কনীতি থেকে লাভ নেওয়া সম্ভব হবে না।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের (অ্যামচেম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বাণিজ্য কূটনীতি এবং দেশটির ব্র্যান্ডিং আরও শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে, তা সঠিকভাবে পরিচালনা এবং সেবা প্রদান বাড়ানো প্রয়োজন।
অর্থনীতির দিক থেকে বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের ওপর উঁচু হারের শুল্ক আরোপের ফলে কারখানা স্থানান্তর আরও বাড়বে এবং এর ফলে এশিয়ার কিছু দেশ, বিশেষত ভিয়েতনাম, লাভবান হতে পারে। তবে বাংলাদেশকে এর জন্য বড় ধরনের সংস্কার ও প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যবসা করার পরিবেশ সহজ করা, দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি শক্তিশালী করা এই সংস্কারের মধ্যে অন্যতম।
মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, র্যাপিড চেয়ারম্যান, প্রথম আলোকে বলেন, “বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হলে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।”