December 23, 2024
গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হবে

গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হবে

নভে ৯, ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনকে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গুমের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত ও জবাবদিহির আওতায় আনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা আপনাদের যা যা প্রয়োজন, সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।” কমিশনের সদস্যরা জানান, তারা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সরকারের কাছে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেবেন এবং পরবর্তীতে আরও কাজ করবেন।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনের মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করা হবে, যার মধ্যে গুমের শিকারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আইনি বিধান থাকবে।

কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তারা প্রায় ১,৬০০টি অভিযোগ পেয়েছেন, যার মধ্যে ৪০০টি অভিযোগ যাচাই করা হয়েছে এবং ১৪০টি অভিযোগকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

কমিশনের এক সদস্য বলেন, তারা অসংখ্য অভিযোগ পেয়ে অভিভূত। অনেক মানুষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের প্রতিশোধের ভয় থেকে কমিশনে আসছেন না, ফলে গুমের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। তাদের ধারণা, গুমের সংখ্যা ৩,৫০০ হতে পারে। তারা আরও জানান, গুমের ঘটনায় যারা জড়িত এবং যাদের নির্দেশে এসব ঘটনা ঘটেছে, তাদের চিহ্নিত করার জন্য কাজ চলছে।

কমিশনের সদস্যরা আরও জানান, অনেক ভুক্তভোগী এখনো কারাগারে রয়েছেন, কিছু ভুক্তভোগী মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি এবং তাদেরকে আদালতে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, কিছু ভুক্তভোগী প্রতিবেশী দেশের কারাগারে বন্দি আছেন।

কমিশনের সদস্যরা সরকারের কাছে দাবি করেছেন, অভিযুক্তদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তাদের পাসপোর্ট বাতিল করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। তারা আরও বলেন, সরকারকে গুমের শিকারদের আটকিয়ে রাখা স্থানগুলোতে প্রমাণ সংরক্ষণের জন্য সহায়তা করতে হবে, যেখানে ভুক্তভোগীরা বছরের পর বছর সূর্যের আলো দেখেননি এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের শুরু হতে দেখা যেত না, বরং কেবল সকালে খাবার পরিবেশনের সময় তাদের নতুন দিনের শুরু বুঝা যেত।

বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের তালিকা পাওয়ার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, কমিশনের তদন্ত জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং গুমের ঘটনার তদারককারীদের প্রকাশ্যে আনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

বৈঠকে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, নূরজাহান বেগম, আদিলুর রহমান খান, এম সাখাওয়াত হোসেন, নাহিদ ইসলাম, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, এবং মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply