December 23, 2024
দুই মাস পানির নিচে ৩৮ লাখ মানুষ

দুই মাস পানির নিচে ৩৮ লাখ মানুষ

নভে ৯, ২০২৪

সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার শিরাশুনি গ্রাম, যা আগে কৃষি ও মাছচাষের জন্য পরিচিত ছিল, এখন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। গত আগস্টে ভারী বৃষ্টি ও নদীর পানি উপচে এই অঞ্চলটি জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়েছে। ফলে গ্রামের হাজারো মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।

শিরাশুনি গ্রামে আগে যে আমন চাষ, মাছচাষ, এবং সবজি উৎপাদন হতো, এবছর তা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টির কারণে আবাদ করা যায়নি এবং কৃষকরা এখন ক্ষতির মধ্যে রয়েছেন। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা পানি সরানোর কোনও কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ কিছু নিষ্কাশন খাল সংস্কার করলেও সরকারি সাহায্য তেমন কিছুই ছিল না।

গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, জলাবদ্ধতার কারণে ১৩টি উপজেলার প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়নি। একই সঙ্গে শীতকালীন সবজি চাষও বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, আগামী মৌসুমের বোরো চাষ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এতে করে, গ্রামগুলোর অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। ক্ষুধা, অভাব এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় অনেকেই পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ধান না পেলে সারা বছর কী খাব, সেই দুশ্চিন্তা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি।”

এছাড়া, গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিরাশুনি পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। একইভাবে, হরিনগর গ্রামে অনেকেই ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্কুল বা মাদ্রাসায়।

জলাবদ্ধতা এবং বন্যার প্রভাব শুধু কৃষি বা শিক্ষা ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই, মৎস্য খাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, জলাবদ্ধতায় মৎস্য খাতেই প্রায় ২২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তবে, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্থানীয়রা নানা উদ্যোগের কথাও বলছেন। চুকনগর কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক হাশেম আলী ফকির বলেন, “বোরো আবাদের জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।”

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেছেন, “বিলের পানি নিষ্কাশনকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং আশাবাদী যে, এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”

তবে, স্থানীয়রা এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি যত দ্রুত সমাধান না হবে, ততই আরও গভীর সংকটের সৃষ্টি হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু না হলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

Leave a Reply