কেন হার কমলার, কোন মন্ত্রে ট্রাম্পের জয়
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পেছনে কী কারণ? কেন হেরেছেন কমলা হ্যারিস?
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, আর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস হেরে গেছেন। তাদের জয়-পরাজয়ের পেছনে কী কারণ ছিল, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও বিশ্লেষণ।
ট্রাম্পের বিজয়ের কারণ
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বিজয়ের পেছনে কয়েকটি মূল কারণ ছিল, যা নির্বাচনী ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
- মার্কিন অর্থনীতি:
ট্রাম্পের বিজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে ভোটাররা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলেন। করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭০-এর দশকের পর সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। বিশেষত, জো বাইডেনের ব্যয়বহুল কর্মসূচির কারণে মূল্যস্ফীতির সমস্যা আরও তীব্র হয়। সিএনএনের একটি জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি মার্কিন ভোটার অর্থনৈতিক বিষয়ে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন, কারণ ট্রাম্প আশ্বাস দিয়েছেন যে, তিনি পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়াবেন, বিশেষ করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে। - বিদেশি যুদ্ধ এবং নিরাপত্তা:
ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন ভোটাররা ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি দেখতে চেয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করে ইউক্রেন সংকট সমাধান করবেন। ট্রাম্প বিদেশী সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের লিপ্ততা কমানোর পক্ষে, এবং গাজা এবং লেবাননে ইসরায়েলি হামলার বিরোধিতা করেছেন, যা তার ভোটারদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। - কমলার ব্যর্থতা:
কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, জো বাইডেনের মেয়াদ শেষের দিকে তার জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার কারণে কমলাকেও তার দায়ভার নিতে হয়েছে। বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলার ওপর এই অজনপ্রিয়তার ছাপ পড়েছিল। দ্বিতীয়ত, কমলা নিজের আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলতে পারেননি এবং তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাখ্যা করতে পারেননি কীভাবে তিনি বাইডেনের চেয়ে আলাদা। - আবেগপূর্ণ গর্ভপাত ও অভিবাসন ইস্যু:
রিপাবলিকানরা গর্ভপাত এবং অভিবাসন নীতি নিয়ে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে, যা মার্কিন শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ট্রাম্প সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ কিছু ভোটারকে আকৃষ্ট করেছেন। তবে, কমলা গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে নারীদের সমর্থন লাভ করলেও, এটি শেষ পর্যন্ত পর্যাপ্ত ছিল না। - আরব-মার্কিনি ও মুসলিম ভোট:
ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ঐতিহাসিকভাবে আরব-মার্কিনি ও ল্যাটিনো ভোটারদের সমর্থন পেয়েছে, কিন্তু এবার তারা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিতে শুরু করেন। বিশেষ করে, গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা এবং বাইডেন প্রশাসনের নিঃশর্ত ইসরায়েলি সমর্থনের কারণে আরব-মার্কিন ভোটাররা কমলার প্রতি বিরূপ হয়ে পড়েন। তারা ট্রাম্পের পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রচারণা চালান এবং মার্কিন সরকারকে ইসরায়েলের প্রতি নীতির পুনর্বিবেচনা করতে বলেছিলেন। - ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাবমূর্তি সংকট:
বাইডেনের প্রশাসনের অনেক নীতির কারণে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে। ডেমোক্র্যাটরা দীর্ঘ সময় ধরে একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছে, যার ফলে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার সুযোগ কমে গেছে। বিশেষত, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরে, কমলা যেটি ঘোষণা করেছিলেন, তাতে তার শক্তি বাড়লেও শেষ পর্যন্ত তা যথেষ্ট ছিল না।
কমলার পরাজয়ের কারণ
কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের পেছনে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় ছিল, যা তাকে ভোটারদের কাছে যথাযথভাবে জনপ্রিয় করে তুলতে পারেনি:
- বাইডেনের অজনপ্রিয়তা:
বাইডেনের জনপ্রিয়তার তীব্র পতন এবং বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে, বিশেষ করে তার অর্থনৈতিক নীতি এবং বিদেশী নীতির কারণে, কমলার পক্ষে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। - ব্যক্তিগত পরিচিতির অভাব:
কমলা হ্যারিস তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন বিশেষ করে নারীদের এবং অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে, কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণায় তার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট হয়নি। তিনি নিজের পরিচিতি এবং বাইডেনের সঙ্গে নিজস্ব পার্থক্য সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেননি, যা তার ব্যর্থতার একটি প্রধান কারণ ছিল। - নেতৃত্বের অভাব:
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থকরা বলছেন, তারা একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছিলেন, কিন্তু কমলা হ্যারিস এমন একটি নেত্রী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেননি যিনি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেন।
বাইডেনের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের বিজয়ের পর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি ট্রাম্পকে তার বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং নির্বাচন ফলাফল স্বীকার করার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। বাইডেন বলেছেন, “গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো, জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী নেতৃত্বের পরিবর্তন” এবং “এটি প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা ও জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করে”।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় এবং কমলা হ্যারিসের পরাজয় একটি জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফলস্বরূপ হয়েছে, যেখানে অর্থনীতি, বিদেশী নীতি, অভিবাসন, এবং গর্ভপাতের মতো বিষয়গুলো ছিল প্রধান প্রভাবক। ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন ভোটাররা পরিবর্তনের আশায় ভোট দিয়েছেন, আর কমলার প্রচারণা শেষ পর্যন্ত ঐ পরিবর্তনের আশাকে পূর্ণ করতে পারেনি।