December 23, 2024
চট্টগ্রামে দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা: নওফেল ও ছাত্রলীগ নেতাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস

চট্টগ্রামে দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা: নওফেল ও ছাত্রলীগ নেতাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস

নভে ৭, ২০২৪

চট্টগ্রামে সম্প্রতি কয়েকবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির, উপাসনালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে দাঙ্গা লাগানোর এক গভীর ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা চলছিল। এই অপচেষ্টা পরিচালনা করছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা এবং পলাতক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, যিনি স্বঘোষিত ইসকন সদস্য। তার নির্দেশনায় চট্টগ্রামের কিছু ছাত্রলীগ নেতা এই দাঙ্গার পরিকল্পনা করছিলেন।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সময়োপযোগী তৎপরতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রটি আপাতত ব্যর্থ হয়েছে। তবে গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে এসব অপকর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক তথ্য-উপাত্ত। চট্টগ্রামের কিছু ছাত্রলীগ নেতা এবং নওফেলের সহযোগীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন, যাতে দেশের অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং জনমনে সরকার বিরোধী স্রোত তৈরি হয়।

একটি সূত্র জানিয়েছে, নওফেল তার সহযোগীদের মাধ্যমে চট্টগ্রামে দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য কিছু ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনায় তাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল, এবং তারা সমন্বিতভাবে হামলা চালানোর স্থান চিহ্নিত করছিলেন। মো. আসিফুর রহমান মিনহাজ নামে মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতা তার সহযোগীর সঙ্গে কথোপকথনে জানিয়েছিলেন, হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরে হামলা চালিয়ে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল, মন্দির ভাঙা এবং দোকানপাটে হামলার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করা, যার ফলে সাধারণ জনগণ ছাত্রদের বিরুদ্ধে চলে যাবে এবং সরকারকে বিপদে ফেলার সুযোগ পাওয়া যাবে।

এছাড়াও, পরিকল্পনায় উল্লেখ ছিল যে, হামলা পরিচালনার জন্য ছাত্রলীগের কর্মীদের একত্রিত করার জন্য গনি বেকারি, জামালখান এবং চেরাগি পাহাড় এলাকায় সমবেত হতে বলা হয়েছিল। হামলার সময় কিছু কর্মীকে টুপি পরিধান করতে বলা হয়েছিল, যাতে পরবর্তীতে দাঙ্গার দায় ছাত্রদের উপর চাপানো সম্ভব হয়। এমনকি, এক পর্যায়ে নওফেলের সহযোগীরা তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যে এসব অপকর্ম সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে পুরস্কৃত করা হবে। তাদের আশা ছিল যে, এর মাধ্যমে সরকারকে বিপাকে ফেলা সম্ভব হবে এবং জনগণের সহানুভূতি হাসিল করা যাবে।

এই ষড়যন্ত্রের ফাঁস হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন মাঠে নেমেছে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতের পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই এই ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অপচেষ্টা শুরু হয়েছিল। চট্টগ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়ি, মন্দির এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার চক্রান্তও সেই সময় থেকেই লক্ষ্য করা যায়। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত বিএনপি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বাড়ানোর মাধ্যমে এই চক্রান্ত ব্যর্থ করেছে।

চট্টগ্রামে দুর্গাপূজা ও বৌদ্ধদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলা চালানোর চেষ্টা, এবং গত মঙ্গলবার হাজারী গলিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টাও সফল হয়নি। পুলিশ এবং যৌথবাহিনীর কঠোর পদক্ষেপে এসব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।

তবে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে যে তথ্য এসেছে, তাতে স্পষ্ট যে, নওফেলসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের কিছু নেতা এই অপকর্মে জড়িত। যদিও নওফেল বর্তমানে পালিয়ে আছেন, তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

এই সকল ঘটনা এবং ষড়যন্ত্রের পেছনে যে গোপন ষড়যন্ত্রকারীরা রয়েছেন, তারা ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, যাতে দেশে অস্থিরতা এবং বিভাজন সৃষ্টি করা যায়।

Leave a Reply