চাপে পড়া জাপার ভবিষ্যৎ কী
জাতীয় পার্টি (জাপা) বর্তমানে প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারালেও সংসদে প্রতিনিধিত্ব, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা এবং বিদেশি বন্ধুত্ব বজায় রেখে চলেছিল দলটি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী দলের পরিচিতি পেলেও, ভোটের মাঠে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে জাপা। জনগণের কাছে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা পাওয়া জাপা এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি থাকলেও দলটির সক্ষমতা নিয়ে সংশয় আছে।
চাপের মুখে দল
সাম্প্রতিক সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং ছাত্র নেতৃত্ব জাপাকে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে জাপা সরকারকে সক্রিয় হতে সাহায্য করতে পারে। জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার পর আন্দোলনের নেতারা জাপা নেতাদের বিচারও দাবি করেছেন। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, “রাজনীতি করলে চাপে পড়তেই হয়। আমরা আইনি ও রাজপথের মাধ্যমে মোকাবিলা করব।” তবে প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী দলটির ওপর চাপের কথা স্বীকার করে এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, কারণ এটি দলের ঐক্য বাড়াচ্ছে বলে তার মত।
ভোটের মাঠে ক্রমশ দুর্বল জাপা
১৯৯১ সালে ক্ষমতাচ্যুতির পর প্রথম নির্বাচনে জাপা ৩৫টি আসন পেলেও, রংপুরকে ঘিরে আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাপাকে ২৯টি আসন ছাড় দেয়, যার ২৭টিতে জিতে তারা কিছু শক্তি পুনরুদ্ধার করে। কিন্তু ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেয়া আসনগুলোতেই জয় পায়, তবে এই সময়ে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির ভোটে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসন পেলেও জাপা মাত্র ১১টিতে জয়ী হয়। রংপুর ছাড়া অন্য কোনো অঞ্চলেই দলটি উল্লেখযোগ্য ভোট পাননি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অবস্থা তথৈবচ। রংপুর সিটি করপোরেশন ছাড়া কোথাও জাপার অবস্থান দৃশ্যমান নয়।
কূটনীতিকদের সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ ও সরকারবিরোধী অবস্থান
এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার দায়িত্ব নিয়ে সরকারবিরোধী মনোভাব পোষণ করলেও জি এম কাদের পরবর্তীতে নীরব হন। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। কাদের দাবি করেন, সরকার তাদের ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে ২০১৪ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায়। তবে দলের কিছু নেতার মতে, জাপা আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে নিজের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, জাতীয় পার্টি জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে সুবিধা ভোগ করেছে এবং তাই তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ খুবই অনিশ্চিত। ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও মনে করছেন, এই দলটি গণতান্ত্রিক আদর্শের পক্ষে না। তবে দলটির ওপর হামলার কারণে কিছু সহানুভূতি তৈরি হতে পারে বলে আশা করছেন জাপার নেতারা।
জাপার বক্তব্য
দলটির মহাসচিব চুন্নু বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে দলের আসল শক্তি বোঝা যাবে। প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার মনে করেন, তিনটি অস্বাভাবিক নির্বাচনের কারণে জাপার শক্তি নির্ণয় করা যায় না। আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা পাওয়া জাপার জন্য ভবিষ্যতে কারও সঙ্গে জোট করা কঠিন হবে বলে শামীম হায়দার স্বীকার করেন।