কোনো দেশের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়া হচ্ছে না
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে নানা গুজব ছড়াচ্ছে, যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের এই দ্বীপটি লিজ দেওয়ার বিষয়টি। তবে এই খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেকিং পেজ। শনিবার (২ নভেম্বর) ফ্যাক্ট চেকিং পেজে দেওয়া একটি পোস্টে জানানো হয়, সেন্টমার্টিনকে কোনো দেশের কাছে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের নেই।
এই পোস্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি প্যাসিফিকের মধ্যে ল্যান্ড ফোর্সেস টকস নামে একটি আলোচনা কার্যক্রম কয়েক বছর ধরে চলছে, যার সাথে সেন্টমার্টিনের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই সেন্টমার্টিনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের প্রচার নিছক গুজব।
অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে সেন্টমার্টিন নানা পরিবেশগত বিপদের মুখে পড়েছে। গত ১৫ এপ্রিল প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পর্যটনের কারণে দ্বীপটিতে উচ্চ তাপমাত্রা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বন উজাড়, দূষণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, কচ্ছপের আবাস ধ্বংসসহ বিভিন্ন বিপদ দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি সাদা মাছির মারাত্মক আক্রমণ দ্বীপের উদ্ভিদকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতে গত কয়েক মাসে ৩০০টি নারকেল গাছ মারা গেছে। গবেষকরা সেন্টমার্টিনের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য মূলত অপরিকল্পিত পর্যটনকে দায়ী করছেন।
আন্তর্জাতিক ও জাতীয় গবেষণায় দেখা গেছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের ৪১ ভাগ প্রবাল ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে, এই ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকলে ২০৪৫ সালের মধ্যে দ্বীপটি প্রবালশূন্য হয়ে যাবে এবং ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। তাই দ্বীপটি রক্ষায় সরকার পর্যটন নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বেআইনি স্থাপনা নিয়ন্ত্রণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণের অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিনের আশপাশের ১,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে। জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় গত কয়েক বছরে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পর্যটন ব্যবসায়ীদের চাপে অনেক উদ্যোগ কার্যকর করা যায়নি। তবে বর্তমানে সরকারের নতুন নীতিমালার মাধ্যমে সেন্টমার্টিনে অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে দিনে ৯০০ জন পর্যটকের ভ্রমণ সীমাবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী পর্যটন মৌসুম থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেন্টমার্টিনের পর্যটন নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যেখানে মার্কিন ঘাঁটি তৈরির মত ভ্রান্ত তথ্যও প্রচারিত হচ্ছে। সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকরা দিনভ্রমণ করতে পারবেন কিন্তু রাতে থাকতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পর্যটকরা রাতে থাকার অনুমতি পাবেন, তবে দিনে ২,০০০ জনের বেশি পর্যটক যেতে পারবেন না। ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপে পর্যটন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ‘কক্সবাজারে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ ও পর্যটন উন্নয়ন জোট’ নামের একটি সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে, যার সদস্যদের অনেকেরই দ্বীপে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা আবাসিক হোটেল রয়েছে। তবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “সেন্টমার্টিন আমাদের জাতীয় সম্পদ, এবং পর্যটকদের দায়িত্বশীল আচরণ দ্বীপটিকে রক্ষায় সহায়তা করবে।”
সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের এসব উদ্যোগ দ্বীপের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।