December 23, 2024
ড. ইউনূস কী পারবেন নতুন বাংলাদেশ গড়তে

ড. ইউনূস কী পারবেন নতুন বাংলাদেশ গড়তে

নভে ১, ২০২৪

বাংলাদেশে সম্প্রতি সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের ফলে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দিল্লিতে চলে গেছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চলা তাঁর সরকার পতনের ফলে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটেছে এবং দেশের সামনে নতুন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর পরপরই, ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন, যার সাথে যুক্ত হয়েছেন সুশীল সমাজের নেতারা। ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূসের অভিজ্ঞতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বে দেশ নতুন এক যুগে প্রবেশ করতে পারে। তাঁর নেতৃত্বে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ, গুম-খুন-নির্যাতন বন্ধ, এবং দুর্নীতিগ্রস্ত এনজিও সংস্কারের প্রত্যাশা করছেন জনগণ। এছাড়াও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস ও আন্তর্জাতিক তহবিল পাওয়ার জন্য আইন সংশোধনের মাধ্যমে প্রশাসনিক কাঠামো সহজতর করার সুযোগ রয়েছে।

তবে ইতিহাস বলে, এমন পরিস্থিতি ক্ষণস্থায়ী হতে পারে এবং সেনাবাহিনী বা অভিজাত গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করতে পারে, যেমনটি সুদানে, পাকিস্তানে, এবং ইরিত্রিয়ায় ঘটেছিল। ২০১৯ সালে সুদানে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পতনের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে ২০২১ সালে সেনাবাহিনী পুনরায় ক্ষমতা দখল করে। পাকিস্তানেও অভ্যুত্থানের পর সামরিক শাসকরা গণতন্ত্রের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস যদি সুশীল সমাজ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে ব্যর্থ হন, তবে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশে আবার কর্তৃত্ববাদী শাসন ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে। চিলি, শ্রীলঙ্কা, এবং গুয়েতেমালা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশও নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে, যেখানে সুশীল সমাজ গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

নতুন সরকারও রাতারাতি সকল ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক সংস্কার নিয়ে আসতে পারবে না, তবে দৃঢ় সংকল্প ও সুশীল সমাজের সাথে অংশীদারিত্বমূলক সংলাপের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা সম্ভব। যদি অধ্যাপক ইউনূস সঠিক সিদ্ধান্ত নেন এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান, তবে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলার মতো প্রেরণাদায়ী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারেন।

বাংলাদেশ বর্তমানে একটি মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অধ্যাপক ইউনূস ও তাঁর উপদেষ্টারা মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতাকে সম্মান করে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হলে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র একটি শক্তিশালী ভিত্তি পাবে। অন্যথায়, অতীতের স্বৈরাচারী শাসনের ছায়ায় হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply