অভিনেতা মাসুদ আলী খানের শেষ দিনগুলো
মাসুদ আলী খান, বাংলাদেশের প্রবীণ অভিনেতা, তাঁর অভিনয়জীবন এবং ব্যক্তিজীবনের নানা গল্প নিয়ে সম্প্রতি আলোচনায় ছিলেন। গত মে মাসে মেরিল-প্রথম আলোর আয়োজনে অংশ নিয়ে তিনি তাঁর প্রিয় সহকর্মীদের সঙ্গে শেষবার দেখা করেছিলেন।
স্মৃতির আড্ডা
ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারের দ্য গ্রেস মিলনায়তনে অনেক পুরোনো সহকর্মী ও প্রিয় মানুষদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। খুরশীদ আলম, সৈয়দ আবদুল হাদী, ফজলুর রহমান বাবুসহ অনেকেই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। তরুণ প্রজন্মের অনেকে তাঁকে সালাম জানাতে ভিড় করেছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে একে একে সবাই যখন বিদায় নিচ্ছিলেন, তিনিও হুইলচেয়ারে করে বের হন। সেই বিদায় মুহূর্তেই তাঁকে ঘিরে ধরেন সহকর্মীরা।
শেষ দিনগুলোর জীবন
বয়সের ভারে ন্যুব্জ মাসুদ আলী খান প্রতিদিনের রুটিনে হাঁটাচলার জন্য হুইলচেয়ারের প্রয়োজন হতো। নিয়মিত চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকতে হতো, ছিল নিয়মিত ওষুধপানের রুটিন। বৃহস্পতিবার দুপুরে খাবার শেষে ঘুমাতে যান, এবং সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর স্ত্রী একসময় বুঝতে পারেন, তিনি আর নড়ছেন না। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি।
শেষ দিনগুলোতে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি
তাঁর শেষ দিনগুলোতে পরিবারের সঙ্গে আনন্দঘন সময় কাটিয়েছেন। ৯৫ বছর বয়সে শিশুর মতো খুশি হয়ে শেষ জন্মদিনটি উদ্যাপন করেন তিনি। তবে তাঁর জীবনে কিছু অপ্রাপ্তি ছিল। একুশে পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তির ব্যাপারে তাঁর ভেতরে একটি সুপ্ত ইচ্ছা ছিল। অবশেষে মেরিল-প্রথম আলোর সম্মাননা পেয়ে তিনি বেশ খুশি হয়েছিলেন।
শেষ দিনের অনুভূতি
ব্যক্তিজীবনে আমুদে মানুষ মাসুদ আলী খান পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসতেন। তাঁর নিয়মিত দেখা করা এবং পরিবারের সদস্যদের একত্রিত হয়ে সময় কাটানোর বিষয়টি ছিল তাঁর জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি সব সময় চান সবাই মিলেমিশে থাকুক।
করোনার সময়ে হতাশা ও ভুয়া আইডির কাণ্ড
করোনার সময়কালে যখন অনেক সহকর্মী বিদায় নিয়েছেন, তখন তাঁর মনের ভেতর এক ধরনের শূন্যতা কাজ করতো। এ সময় তাঁর নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলা হয়, যা তাঁকে বেশ কষ্ট দেয়। এই ভুয়া আইডি থেকে তানভীন সুইটি ও নির্মাতা কাউসার চৌধুরীসহ আরও অনেকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়, যা তাঁর মানসম্মান নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল।
‘নদী ও নারী’ সিনেমার এই নায়ক শেষ দিনগুলোতে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির মাঝামাঝি অবস্থায় জীবন কাটিয়েছেন। তবে সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি এক প্রশান্তির জীবন যাপন করেছিলেন।