গ্যাস সংকটে থমকে গেছে উৎপাদন, হুমকিতে শিল্প
গ্যাস সংকট: শিল্প খাতে সংকট তীব্র, অর্থনীতি হুমকির মুখে
দেশে গ্যাস সংকটের কারণে প্রতিদিন প্রায় ১৩৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প খাত, যেখানে চাহিদার তুলনায় ৩০ শতাংশ কম গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, চট্টগ্রাম, নরসিংদীসহ দেশের প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলোতে এই সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
শিল্প খাতে সংকট
গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে শিল্প কারখানাগুলোর। অনেক কারখানার উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে, কোনো কোনোটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করতে হচ্ছে মালিকদের। এতে রপ্তানি কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও চাপ পড়ছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কারখানা চালু রাখার তুলনায় বন্ধ রাখাই এখন লাভজনক। সংকটের কারণে সিএনজি স্টেশনগুলোতেও গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে, তবুও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস মিলছে না।
গ্যাস সংকটের কারণ ও পরিমাণ
দেশের দৈনিক গ্যাস চাহিদা প্রায় ৪২০ কোটি ঘনফুট, এর বিপরীতে গড়ে মাত্র ২৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে, যার মধ্যে এলএনজি আমদানি করা গ্যাস ৮৯ কোটি ঘনফুট। এ ছাড়া বিদ্যুতে ৯৩ কোটি, শিল্পে ১০২ কোটি, সার কারখানায় ২০ কোটি, সিএনজিতে ১ কোটি এবং আবাসিক ও বাণিজ্য খাতে ৫৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
বস্ত্র খাতে সংকটের তীব্রতা
বস্ত্রকলগুলোতে গ্যাস সংকট দুই বছর ধরে চলছে। গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে তা কমে ১-২ পিএসআইয়ে নেমে এসেছে। এর ফলে উৎপাদন ক্ষমতা ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। গ্যাসের বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে গিয়ে উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে।
কারখানা বন্ধ হওয়া ও ক্ষতির পরিমাণ
সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কারখানাগুলোতে গ্যাসের পরিবর্তে ডিজেল ব্যবহার করে উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে, যা বাড়তি ব্যয় বাড়াচ্ছে। গাজীপুরের ভোগড়া, বাসন সড়ক, পুবাইল, জয়দেবপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চরম সংকট বিরাজ করছে। এতে অনেক কারখানা উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে।
গবেষক ও উদ্যোক্তাদের মতামত
গবেষকরা মনে করেন, শিগগিরই গ্যাস সংকট কাটবে না। বিগত সময়ে সরকার আমদানির দিকে বেশি মনোযোগ দেয়ায় দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে অবহেলা দেখা গেছে। এতে গ্যাস উৎপাদন কমে আসছে, চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এলএনজি উচ্চ মূল্যের হওয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি করা যাচ্ছে না।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গ্যাস সংকট সমাধানে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রমে গুরুত্ব দিতে হবে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহে সহায়তা করতে হবে।
সরকারের উদ্যোগ
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, গ্যাস সংকট সমাধানে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে।