আল জাজিরার প্রতিবেদন- ফেরারি ছাত্রলীগ, নেই ভবিষ্যৎ
কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সম্প্রতি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি গত ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রলীগকে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে সহিংসতা, হয়রানি, এবং জনসম্পদের অপব্যবহারসহ গুরুতর অসদাচরণের দায় রয়েছে ছাত্রলীগের ওপর।
প্রতিবেদনটির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ২৪ বছর বয়সী ফাহমি (ছদ্মনাম) নামের একজন শিক্ষার্থী, যিনি ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একসময় প্রভাবশালী ছিলেন। কিন্তু আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি গণআন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। শেখ হাসিনা, যিনি দীর্ঘ ১৫ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছেন, আন্দোলনের চাপে ভারত পালিয়ে যান।
ফাহমি আল জাজিরাকে জানান, একসময় তিনি ক্যাম্পাসে কর্তৃত্বের প্রতীক ছিলেন, কিন্তু এখন তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তার এই অবস্থা হাজারো শিক্ষার্থীর মতোই, যারা একসময় আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্রসংগঠনের সদস্য ছিলেন এবং দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে প্রভাবশালী অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তনের পর তারা এখন উচ্ছেদ, প্রতিশোধ, এমনকি কারাবাসের শিকার হচ্ছেন।
ফাহমি স্বীকার করেন যে, হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি অংশ না নিলেও তার দলীয় আনুগত্য তাকে এক ধরনের সংকটের মধ্যে ফেলেছিল। বিক্ষোভ চলাকালীন তার পরিবারের বাড়ি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়, এবং তাকে তার অবস্থান প্রকাশ না করলে ছোট ভাইকে ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়।
ফাহমি আরও জানান, ছাত্রলীগের একজন নেতা হওয়ার সুবাদে সরকারি চাকরির সুযোগ তার জন্য উজ্জ্বল ছিল। তবে তিনি এখন উপলব্ধি করছেন যে, তার দল তাকে শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে। যখন সংকট এলো, তখন দলের শীর্ষ নেতা বা ছাত্রলীগের কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ফাহমি নয়, সারা দেশে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫০,০০০ শিক্ষার্থী এমন পরিস্থিতিতে আছেন, যারা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছেন।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। ২৩ অক্টোবর সরকার এক গেজেটে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (২০০৯) অধীনে নিষিদ্ধ করে। পরিহাসের বিষয় হলো, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে এই আইনটি পাস করা হয়েছিল। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।