নিষেধাজ্ঞায় ছাত্র রাজনীতি কলুষমুক্ত হবে না
সাবেক ছাত্রনেতারা মনে করেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করলেও ছাত্র রাজনীতি কলুষমুক্ত হবে না। বরং এতে জনগণের মন থেকে তাদের অপরাধ আড়াল হয়ে সহানুভূতি অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে। শেখ হাসিনার শাসনামলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর অপরাধের স্বচ্ছ বিচার দাবি করেছেন তারা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির চাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্রলীগকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে। এই সিদ্ধান্তে অভ্যুত্থানকারী ছাত্রনেতারা উল্লসিত হলেও আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলো নিরব সমর্থন জানিয়েছে।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন, ছাত্রলীগের অপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত। তবে শুধু নিষিদ্ধ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। বরং এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা অপরাধ ভুলিয়ে সহানুভূতি অর্জনের সুযোগ তৈরি করবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র নেতৃত্ব গড়ে তোলার ওপর তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন।
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন ছাত্রনেতার হাত ধরে। ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা, গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্য, এবং বিরোধীদের ওপর হামলার মতো অভিযোগ ওঠে। এই সময়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রায় অর্ধশত প্রাণহানি ঘটে।
বিএনপির উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান মনে করেন, ছাত্র সংগঠনের কাজ সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত করা। তবে ছাত্রলীগের নামে যেভাবে সহিংসতা, ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি এবং হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা একটি ছাত্র সংগঠনের কাজ হতে পারে না। তিনি মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ছাত্রলীগের মাতৃসংগঠন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার ফল সীমিত হতে পারে। গণহত্যার মতো অপরাধের জন্য তাদের বিচার হওয়া উচিত। তবে রাজনৈতিকভাবে এই সংকট মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি জোর দিয়েছেন।
২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের দমনমূলক ভূমিকার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত হয়। অভ্যুত্থানের পরে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারাও আত্মগোপনে চলে যান।
বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ১৯৯০ সালের পর থেকে পালাক্রমে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নামে ক্যাম্পাসে যে সন্ত্রাস চলেছে, তার অবসান হওয়া দরকার। তিনি মনে করেন, এই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত, তবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে ঐকমত্য প্রয়োজন।