শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র আমার কাছে নেই: রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, তিনি শুনেছেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু এ বিষয়ে তার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথি নেই। মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি এ মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটি শনিবার পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, যদি প্রধানমন্ত্রী সত্যিই পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটির অনুলিপি কারো না কারো কাছে থাকার কথা। কিন্তু তিন সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালানোর পরও কোথাও এর খোঁজ মেলেনি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও যোগাযোগ করা হয়েছে, যেখানে সাধারণত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র সংরক্ষিত থাকে, কিন্তু সেখানেও কিছু পাওয়া যায়নি। তাই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছেই সরাসরি বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়।
৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলন ও গণবিক্ষোভের মুখে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সংবিধানের ৫৭ (ক) ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে। তবে রাষ্ট্রপতি জানান, তার কাছে শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র বা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রমাণ পৌঁছায়নি।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, “আমি বহুবার পদত্যাগপত্র খোঁজার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। হয়তো তার সময় হয়নি।” তিনি জানান, ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বঙ্গভবনে ফোন আসে যে প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাতের জন্য আসবেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আরেকটি ফোন আসে যে তিনি আসছেন না।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “চারদিকে অস্থিরতার খবর শুনছি। আমি গুজবের ওপর নির্ভর করতে পারি না। সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে, কিন্তু তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। পরে শুনলাম, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, আমাকে কিছু না জানিয়েই।”
রাষ্ট্রপতি আরও জানান, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে আসেন, তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চান। সেনাপ্রধানের কাছ থেকেও একই জবাব পান—“শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর সময় পাননি।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব পরে রাষ্ট্রপতির কাছে এসে পদত্যাগপত্রের কপি চেয়েছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি তাকে বলেন, “আমিও খুঁজছি।”
সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন, এটি সত্য। তবে এ বিষয়ে যেন আর কোনো বিতর্ক না ওঠে, সে জন্য তিনি সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ৮ আগস্ট তাদের মতামত দেন, যেখানে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এবং নির্বাহী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীর শপথ করাতে পারবেন বলে আপিল বিভাগ মতামত দেন।
এছাড়া সাক্ষাৎকারে জানা যায়, দেশ ছাড়ার আগমুহূর্তে শেখ হাসিনা রেডিও-টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এবং সেনাপ্রধানের অনাগ্রহে তা সম্ভব হয়নি। তিনি তার ভাষণে উল্লেখ করতে চেয়েছিলেন যে, তাকে বলপূর্বক দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে এবং কোন বিদেশি শক্তি তার সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছে তা দেশবাসীকে জানাতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সি-১৩০ বিমানে তাকে দিল্লি পাঠানো হয়, যেখানে তার সঙ্গে ছিলেন ছোটবোন শেখ রেহানা এবং নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক।