সব কূলহারা জাতীয় পার্টি
বিগত চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টি (জাপা) এবার প্রধান উপদেষ্টার সংলাপে আমন্ত্রণ পায়নি। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব জাপাকে আওয়ামী লীগের সহযোগী মনে করায় তাদের সংলাপে ডাকা হয়নি।
জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “সরকার হয়তো জাতীয় পার্টির মতামতকে প্রয়োজনীয় মনে করছে না, তাই আমাদের সংলাপে ডাকা হয়নি। এ নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই, সরকার না চাইলে আমরা পরামর্শ দেব না।”
গতকাল শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ করলেও, অতীতে সরকার ও বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাপাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। দলটির সূত্র জানায়, জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপার নেতারা সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে সমর্থন দিয়েছিল এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাপা। তিন বছর পর তারা বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধে, তবে এক বছরের মধ্যেই সে জোট ভেঙে যায়। ২০০৬ সালে তারা আওয়ামী লীগের মহাজোটে যোগ দেয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার জোট জাপাকে ২৯টি আসন ছেড়ে দেয়, এবং পরবর্তীতে জাপা নেতা জি এম কাদের হাসিনা সরকারের মন্ত্রী হন।
২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাপার একাংশ রওশন এরশাদের নেতৃত্বে অংশ নেয় এবং ৩৪টি আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হয়। পরে দলটি ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ হিসেবে সমালোচিত হয়, কারণ জাপার কয়েকজন এমপি শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে জাপা ২২টি আসন পেয়ে আবারও প্রধান বিরোধী দল হয়, তবে তাদের এমপিরা সংসদে শেখ হাসিনার প্রশংসায় মুখর ছিলেন। ২০১৯ সালে জি এম কাদের নেতৃত্বে আসার পর সরকারবিরোধী সমালোচনা করলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নীরব হয়ে যান। ২০২4 সালের নির্বাচনে জাপা ১১টি আসন পেয়ে বিরোধী দল হয়, তবে জি এম কাদের অভ্যুত্থান সমর্থনকারী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর জাপাকে সেনাসদর ও বঙ্গভবনে ডাকা হলেও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ তাদের সংলাপে ডাকার বিরোধিতা করেন।
জাপার সূত্র জানিয়েছে, জুলাইয়ের গণহত্যা ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগে দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলা হয়েছে। ফলে সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখা সত্ত্বেও জাপা এখন রাজনৈতিকভাবে সংকটে পড়েছে, এবং কোনো দল তাদের প্রতি সমর্থন বা সহানুভূতি দেখাচ্ছে না।