তারেক রহমানের ৮০ মামলার ভবিষ্যৎ কী
লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এই বিষয়ে নানা মতামত ও জল্পনা-কল্পনা চলছে।
বিএনপি শুরু থেকেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোকে ‘রাজনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে সেগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। বিএনপি নেতারা বলছেন, মামলাগুলো প্রত্যাহার হলে তারেক রহমান আগামী বছরের শুরুতে দেশে ফিরতে পারেন।
সোমবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তারেক রহমানের সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, অবিলম্বে তারেক রহমানের সব মামলা প্রত্যাহার না করা হলে তারা ফের আন্দোলনে নামবে।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ মোট ৮০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যার মধ্যে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়েরকৃত বেশ কিছু মামলা রয়েছে। বিগত ছয় বছরে পাঁচটি মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, অর্থ পাচার ও মানহানির মামলা। বিভিন্ন আদালত পলাতক দেখিয়েই মামলাগুলোর বিচার সম্পন্ন করেছেন।
বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, তারেক রহমান আইনি প্রক্রিয়ায় মামলাগুলো মোকাবিলা করবেন। তবে সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা বাতিল বা স্থগিত করতে পারে। বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তারেক রহমানের কোনো মামলা প্রত্যাহার হয়নি, যা বিএনপির মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:
- অর্থ পাচার মামলা: সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের অভিযোগে করা মামলায় ২০১৬ সালে হাইকোর্ট তারেক রহমানকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে।
- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা: ২০১৮ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিস্ফোরক মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা: ২০১৮ সালে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
- জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মামলা: ২০০৭ সালে দায়ের করা এ মামলায় তাকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
- মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মন্তব্য করার কারণে মানহানির অভিযোগে এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের কারণে রাষ্ট্রদ্রোহের একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
বিএনপি নেতারা আশা করছেন, মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবিলা করে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। তবে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেটিই মূল প্রশ্ন।