বিপুল ব্যয়ে স্টেশনবিলাস
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেলস্টেশনটি একদিকে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন হলেও বাস্তবিক চাহিদার তুলনায় এর ব্যবহার অত্যন্ত কম। স্টেশনটি থেকে প্রতিদিন মাত্র ৪৭ জন যাত্রী যাতায়াত করে, যা প্রাথমিকভাবে অনুমিত ১০,০০০ যাত্রীর সংখ্যার তুলনায় অনেক কম। স্টেশনটি চালু হওয়ার পর থেকে তিন বছরে আয় হয়েছে মাত্র ৯ লাখ টাকার মতো, যেখানে বছরে এর ব্যয় ৩০ লাখ টাকার বেশি। এর ফলে স্টেশনটি আয়-ব্যয়ের দিক থেকে বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এই স্টেশনটি ২০১৫ সালে হাইটেক পার্ক কেন্দ্র করে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হয়। তবে বর্তমানে শুধুমাত্র দুটি ট্রেন—টাঙ্গাইল কমিউটার ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস—এ স্টেশনে থামে। অন্য ট্রেনগুলো এই স্টেশনে থামে না কারণ পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে স্টেশনটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
রেলের অন্যান্য প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারে গত ১৫ বছরের শাসনামলে রেলের যাত্রীসেবা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রচুর রেললাইন, স্টেশন ভবন এবং মেরামত প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও, ইঞ্জিন ও কোচ কেনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর ফলে অনেক লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং চলমান ট্রেনগুলোও সময়সূচি মেনে চলতে পারছে না।
এই পরিস্থিতি রেলের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অপরিকল্পিত বাস্তবায়নের একটি উদাহরণ। ব্যয়বহুল স্টেশন ও রেললাইন নির্মাণ হলেও সেগুলোর সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যাত্রীসেবার দিকে মনোযোগ না দিয়ে অবকাঠামো উন্নয়নে অতিরিক্ত ব্যয় রেলের অপচয় হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামানের মতে, “রেলের প্রধান কাজ হলো যাত্রীসেবা প্রদান করা। কিন্তু এই খাতে যাত্রীসেবার উন্নয়নের কোনো লক্ষণ নেই। ইঞ্জিন ও কোচের অভাবে লোকাল ট্রেন বন্ধ হচ্ছে এবং বিদ্যমান ট্রেনগুলোকেও জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে।”
এই ধরনের পরিস্থিতি রেলের সামগ্রিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।